Oil Price

তেলের দরে চঞ্চল বাজার, চোখ রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের দিকে

দিকে দিকে ‘স্বয়ংসম্পূর্ণ ভারত’-এর স্লোগান তোলা হলেও, জ্বালানিতে দেশ তেমন এগোয়নি। এখন জোর দেওয়া হচ্ছে বিকল্প জ্বালানি উৎপাদনে।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:৩৩
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

বিশ্ব বাজারে তেলের দাম ফের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে বহু দেশকে। গত বৃহস্পতিবার অশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুড এক সময়ে পৌঁছে যায় ব্যারেল পিছু ৯৭ ডলারে। বেশ কিছু দিন ৭০-৭৫ ডলারের নেমে থাকা জ্বালানি এতটা মাথা তোলায় তার তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়ে শেয়ার বাজারে। ওই দিন সেনসেক্স হারায় ৬১০ পয়েন্ট, নিফ্‌টি ১৯৩। এখন ব্রেন্ট ৯২ ডলারের উপরে। ভারতের মতো তেল আমদানিকারী দেশের কাছে যা বেশ চিন্তার। দাম যদি ১০০ ডলারের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করে, তা হলে চাপ বৃদ্ধির আশঙ্কা অর্থনীতিতে। এর প্রভাবে যা হতে পারে সেগুলি হল—

Advertisement
  • তেল আমদানির খরচ বাড়বে। ফলে বাড়বে দেশের বিদেশি মুদ্রার খরচ। তখন ডলারের চাহিদা চড়বে। যা টাকার দামকে টেনে আরও নামাবে। এক ডলার ইতিমধ্যেই ৮৩ টাকা ছাড়িয়েছে। এখন তা ৮৩.০৪ টাকা।
  • চাপ বাড়তে পারে অর্থনীতির। বিশ্ব বাজারে তেল ৭০-৭৫ ডলার থাকাকালীন ভারতে পেট্রল-ডিজ়েল সস্তা হয়নি। প্রায় বছর দেড়েক কলকাতায় (আইওসি-র পাম্পে) পেট্রলের লিটার ১০৬.০৩ টাকা, ডিজ়েল ৯২.৭৬ টাকা। আমজনতা জ্বালানিতে সুরাহা পাননি। তবে বিশ্ব বাজারে কম দামের সুবিধা নিয়ে তেল শোধন এবং বিপণন সংস্থাগুলি গত অর্থবর্ষে মোটা মুনাফা ঘরে তুলেছে। চড়া শুল্কে রাজকোষ ভরেছে সরকারও। গত জুলাই পর্যন্ত রাশিয়া থেকেও সস্তায় বিপুল তেল কিনছিল ভারত। অগস্ট থেকে তা-ও কমেছে। কম দামে বেশি তেল না কিনতে পারলে উদ্বেগ বাড়বে।
  • জারি থাকবে চড়া সুদের জমানা। এই অর্থবর্ষে আরবিআই সুদ কমানোর কথা হয়তো বিবেচনার মধ্যেই আনতে পারবে না। বরং পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি চড়তে থাকলে সুদ বাড়ানোর প্রশ্ন উঠতে পারে। এ ব্যাপারে আরবিআইয়ের সিদ্ধান্ত জানা যাবে ৬ অক্টোবর।
  • ক্রমাগত কমছে ভারতের রফতানি। তেলের কারণে আমদানি খরচ বাড়তে থাকলে চওড়া হবে বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি। টাকাকে দুর্বল করে আরও মাথা তুলবে ডলারের দাম।

দিকে দিকে ‘স্বয়ংসম্পূর্ণ ভারত’-এর স্লোগান তোলা হলেও, জ্বালানিতে দেশ তেমন এগোয়নি। এখন জোর দেওয়া হচ্ছে বিকল্প জ্বালানি উৎপাদনে। এতে ব্যাটারি চালিত গাড়ি, জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত ইথানল, সৌর শক্তি, জল বিদ্যুৎ ইত্যাদি শিল্প উপকৃত হবে। তবে তার সুবিধা সাধারণ মানুষের ঘরে পৌঁছতে দেরি আছে।

Advertisement

আগের বছরের ৪.২ শতাংশের তুলনায় অগস্টে পরিকাঠামো শিল্পে ‌১২.১% উৎপাদন বৃদ্ধি অর্থনীতির পক্ষে সুখবর। স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলির মধ্যে অক্টোবর-ডিসেম্বরে সুদের হার বেড়েছে শুধু ৫ বছর মেয়াদি রেকারিং ডিপোজ়িটে। ছিল ৬.৫%, হয়েছে ৬.৭%। অন্য কোনও প্রকল্পে তা বাড়েনি। অর্থাৎ পিপিএফ (৭.১%), সিনিয়র সিটিজেন্স সেভিংস স্কিম (৮.২%), এনএসসি (৭.৭%), মাসিক আয় প্রকল্পে (৭.৪%) সুদ স্থির। বাজারের এখন নজর ৪-৬ অক্টোবরের ঋণনীতি বৈঠকে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ বাড়ায় কি না, তার উপরে। এ বার বর্ষার বিদায় নেওয়ার পালা। শেষ ক’দিনে গড় বৃষ্টিপাতের অনেকটা উন্নতি হয়েছে। তবে বর্ষা দেশের সব জায়গায় সমান হয়নি।

এই সব নানা কারণে আপাতত তাই চঞ্চল থাকবে শেয়ার বাজার। নজর থাকবে অশোধিত তেলের দাম, সুদ নিয়ে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্ত এবং জুলাই-সেপ্টেম্বরে সংস্থার ফলে।

(মতামত ব্যক্তিগত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement