প্রতীকী ছবি
করোনা-উদ্ভূত আশঙ্কাকে আমল না-দিয়েই বেশ কিছু দিন ধরে উঠেছে সেনসেক্স। অতিমারির টিকা দ্রুত বাজারে আসা নিয়ে বাড়তে থাকা আশা যার প্রধান জ্বালানি। তবে গত সপ্তাহের শেষ দু’দিন সূচকটি ফের নেমেছে ৩৭,৬০৭ অঙ্কে। করোনা চট করে পিছু ছাড়বে না বলে যে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে, এটা তার জের হতে পারে। এটাও হতে পারে, অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়াতে যে আরও অনেকটা সময় লাগবে, সেটা স্পষ্ট হচ্ছে।
শুক্রবার সরকারি পরিসংখ্যান জানিয়েছিল, জুনে ১৫% উৎপাদন কমেছে দেশের আটটি মূল পরিকাঠামো ক্ষেত্রের। অর্থাৎ মোদী সরকার যতই দাবি করুক অর্থনীতির চাঙ্গা হওয়ার লক্ষণ স্পষ্ট, বাস্তবে তাঁর জোরালো আভাস নেই। তবে এই হিসেব বেরোয় বাজার বন্ধের পরে। ফলে তার প্রভাব আজ পড়তে পারে। বিশেষত করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা যেখানে লাফিয়ে বাড়ছে। এই অবস্থায় লগ্নিকারীদের অধীর আগ্রহ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি নিয়ে। ফের সুদ কমে কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা। মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি সেই পর্ব চলবে। ফলে এ সপ্তাহে বাজার কিছুটা অস্থির থাকতে পারে। শেয়ার কেনার ঝোঁক যদি বাড়েও, সূচক একটু উঠলে বিক্রির প্রবণতাও বেশি থাকবে হয়তো।
অনেকেরই বক্তব্য মূল্যবৃদ্ধি যে ভাবে মাথা তুলছে, তাতে সুদ কমার সম্ভাবনা এ বার কম। শিল্প অবশ্য সুদ আরও কমার অপেক্ষাতেই দিন গুনছে। আনলক-১ এবং ২ পেরিয়ে দেশ আনলক-৩ পর্বে পা রেখেছে। পুরোদমে না হলেও, লকডাউন শিথিলের পর থেকে অনেকটাই শুরু হয়েছে আর্থিক কাজকর্ম। কিন্তু জুনে মূল আটটি পরিকাঠামো শিল্পের প্রত্যেকটিরই উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের থেকে কমেছে। সব থেকে অবস্থা খারাপ ইস্পাত শিল্পের, যেখানে উৎপাদন সঙ্কুচিত ৩৩.৮%। করোনার আবহে এটা অবশ্য অপ্রত্যাশিত নয়।
অবস্থা খারাপ সরকারি কোষাগারেরও। এরই মধ্যে ঘাটতি ছুঁয়েছে গোটা বছরের বাজেটে প্রস্তাবিত ঘাটতির ৮৩.২% (৬.৬২ লক্ষ কোটি টাকা)। যেখানে বাজেটে চলতি অর্থবর্ষের জন্য ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৭.৯৬ লক্ষ কোটি টাকা। এক দিকে কম কর আদায় এবং অন্য দিকে অতিমারির কারণে বিপুল খরচ বৃদ্ধি এতটা ঘাটতির কারণ।
গত সপ্তাহে চলতি অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসের আর্থিক ফল প্রকাশ করেছে বহু সংস্থা। স্টেট ব্যাঙ্কের নিট লাভ ৮১% বেড়ে পৌঁছেছে ৪১৮৯ কোটি টাকায়। রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ়ের ৩১% বেড়ে ১৩,২৩৩ কোটিতে। আইওসি-র কমেছে ৪৭%। এইচডিএফসি এবং কগনিজ়্যান্টেরও কমেছে যথাক্রমে ৪.৭% এবং ২৯%। দ্বিগুণ বেড়ে টাটা মোটরসের লোকসান পৌঁছেছে ৮৪৩৮ কোটি টাকায়। অনেক বছর পরে লোকসান করল মারুতি সুজুকি। ২৬৮ কোটি টাকা। প্রায় ৫.৫৬ গুণ বেড়ে এয়ারটেলের লোকসান ১৫,৯৩৩ কোটি। বিমান সংস্থা ইন্ডিগো ও স্পাইসজেটের ক্ষতি যথাক্রমে ২৮৪৪ কোটি এবং ৮০৭ কোটি টাকা। আর ১১৬ কোটি কমে কোটাক মহীন্দ্রা ব্যাঙ্কের লাভ নেমে এসেছে ১২৪৪ কোটি টাকায়।
(মতামত ব্যক্তিগত)