—প্রতীকী চিত্র।
ভোটের আগের অন্তর্বর্তী বাজেটে জনমোহিনী ঘোষণার পথে হাঁটেনি মোদী সরকার। তবে পরিকাঠামো তৈরিতে সরকারি মূলধনী খরচ বৃদ্ধি, কৃষি নির্ভর শিল্পে বাড়তি বরাদ্দ, পূর্বাঞ্চলের উন্নতিতে জোর, রেলের নতুন করিডর তৈরি-সহ হাতে গোনা যেটুকু প্রস্তাব দিয়েছে, তাতেই অর্থনীতির আরও উন্নতি দেখছে শিল্প। শুধু শর্ত, প্রস্তাব কার্যকর হতে হবে সময়ে। শুক্রবার বাজেট নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণের পরে শিল্পকর্তা ও বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, কেন্দ্র প্রতিশ্রুতি রাখলে সুফল পাবে রফতানি, প্যাকেজিং-সহ নানা ক্ষেত্র। মানুষের আয় বাড়বে। কাজ তৈরি হবে। বাড়তি নগদ হাতে আসবে অনেকেরই। তাঁরা দৈনন্দিন খরচ মিটিয়ে টিভি, ফ্রিজ়ের মতো ভোগ্যপণ্য কিনতে পারবেন। উৎপাদন ও চাহিদা, দুই-ই বাড়বে।
বণিকসভা সিআইআইয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় ও সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের মতে, কেন্দ্র পরিকাঠামো-সহ দেশের সম্পদ তৈরিতে দীর্ঘমেয়াদি
ও ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। লগ্নিকারীদের কাছে আর্থিক সুবিধার থেকেও আকর্ষণীয় সরকারের এমন দীর্ঘমেয়াদি ভাবনা। কারণ স্বল্প মেয়াদে নীতির বদল হলে ধাক্কা খায় পুঁজির ভবিষ্যৎ। ইঞ্জিনিয়ারিং এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান রকেশ শাহ বলছেন, রেলের নতুন তিনটি করিডর তৈরি হলে পরিকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গেই উপকৃত হবে রফতানি শিল্প। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের পূর্বাঞ্চলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অনির্বাণ দত্তের বক্তব্য, পিএম আবাস যোজনায় গ্রামে নতুন দু’কোটি বাড়ি সিমেন্ট, ইস্পাত, ইটের মতো পণ্যের চাহিদা বাড়বে। ফলে সেগুলির উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি কাজ তৈরি হবে। বহু মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হলে ভোগ্যপণ্য বিকোবে বেশি।
বেঙ্গল চেম্বারের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট অর্ণব বসুর দাবি, অর্থনীতিকে অগ্রগতির রাস্তায় এগিয়ে দেওয়ার দিশা রয়েছে বাজেটে। তার অন্যতম দুই শর্ত সামাজিক কল্যাণ আর রেল-বন্দর-বিমানবন্দরের মতো পরিকাঠামো গড়ার বার্তাও স্পষ্ট, দাবি দীপঙ্করবাবুর। তবে তাঁর মতে, পরিকাঠামোয় খরচের ফল মিলতে সময় লাগে। রাতারাতি তা হয় না।
ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলির সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মাইক্রো ফাইনান্স ইনস্টিটিউশনসের রাজ্য সম্পাদক কূলদীপ মাইতি লাখপতি দিদির সংখ্যা বেড়ে তিন কোটি হলে ক্ষুদ্রঋণ বৃদ্ধির আশা করছেন। আর ইস্টার্ন ইন্ডিয়া বক্স ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অচ্যুত চন্দ্রের ভরসা, কৃষি নির্ভর শিল্প ও পরিকাঠামোয় উন্নয়নের বার্তা মানেই হিমঘর, আধুনিক গুদামঘর তৈরি হবে। প্যাকেজিং সংস্থাগুলির ব্যবসা বাড়বে।
বাজেট বরাদ্দ বাড়িয়ে মাছ চাষ প্রায় দ্বিগুণ করার পাশাপাশি ১ লক্ষ কোটি টাকার রফতানির যে লক্ষ্য স্থির হয়েছে, তাতে এই ক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত সব পক্ষের লাভ হবে ও সুফল পৌঁছবে পশ্চিমবঙ্গে, অভিমত সিফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাজর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর কথায়, ‘‘পাঁচটি নতুন অ্যাকোয়া পার্কের একটি রাজ্যে করার জন্য আর্জি জানাব। কারণ মাছ চাষে অন্ধ্রপ্রদেশের পরেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।’’