প্রতীকী ছবি।
কোভিড হানা দেওয়ার আগেই অর্থনীতির ঝিমুনির জেরে উৎপাদন কমতে শুরু করেছিল শিল্পে। অতিমারির একের পর এক ঢেউ তাকে তলানিতে আছড়ে ফেলে। মঙ্গলবার সরকারি পরিসংখ্যানে প্রকাশ, দীর্ঘ দিন পরে গত মে মাসে কোনও নিচু ভিত ছাড়াই তাক লাগানো হারে বেড়েছে উৎপাদন। শিল্প বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে তার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯.৬%। এক বছরের মধ্যে সব থেকে বেশি।
পরিসংখ্যান বলছে এর কারণ মূলত, কল-কারখানা, বিদ্যুৎ এবং খনন ক্ষেত্রে চোখে পড়ার মতো উৎপাদন। এর আগে এপ্রিলে শিল্প বৃদ্ধির হার ছিল ৬.৭% (সংশোধিত)। আর গত বছর মে মাসে ছিল ২৭.৬%। তবে সে বার এত উঁচু হারের কারণ ছিল ২০২০ সালের মে মাসে তলিয়ে যাওয়া ভিত।
তবে পুরোপুরি খুশি হতে পারছে না সংশ্লিষ্ট মহলের বড় অংশ। কারণ উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই-র তথ্য বলছে, ১০ জুলাই শেষ হওয়া সপ্তাহেও দেশে তার আগের সপ্তাহের থেকে বেড়েছে বেকারত্বের হার। ৬.৪১% থেকে তা বেড়ে হয়েছে ৭.১৭%। গ্রাম এবং শহর, এই দুই জায়গায় আলাদা ভাবে চোখ রাখলেও হতাশা বাড়ছে। কারণ, বেকারত্ব চড়েছে দুই অঞ্চলেই। গ্রামে ৫.৮৯% থেকে বেড়ে হয়েছে ৬.৯৩% আর শহরে ৭.৫৫% থেকে সামান্য হলেও বেড়ে ৭.৬৯%। এমনকি যে মাসে শিল্পোৎপাদন এত চড়া, সেই মে মাসেও সারা দেশে বেকারত্বের হার ছিল ৭.১২%। জুনে আরও কিছুটা বেড়ে হয় ৭.৮০%। উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে ৭ শতাংশের উপরে থাকা মূল্যবৃদ্ধির হার এবং লাগাতার পড়তে থাকা টাকার দাম।
প্রশ্ন উঠছে, শিল্পের কর্মকাণ্ড এতখানি বৃদ্ধির প্রতিফলন কাজের বাজারে দেখা যাচ্ছে না কেন? সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের মতে, বহু সংস্থা পুরোদমে কাজ শুরু করলেও কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে হাত গুটিয়ে বসে। এমনকি যাদের লোক দরকার, তারাও আপাতত সেই পরিকল্পনা পিছোচ্ছে। এর অন্যতম কারণ, বাড়তে থাকা সুদের হারে সংস্থার লগ্নির খরচ বৃদ্ধির আশঙ্কা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও মূল্যবৃদ্ধির আবহে অর্থনীতি নিয়ে বহাল থাকা উদ্বেগ। তার উপরে সব কিছু খুলে যাওয়ায় কাজের বাজারে ভিড় বাড়ছে। অথচ তত জনকে দেওয়ার মতো কাজ তৈরি হচ্ছে না।
এ দিন সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, মে মাসে কল-কারখানায় উৎপাদন বেড়েছে ২০.৬%। আগের বছর বৃদ্ধি ছিল ৩২.১%। বিদ্যুতে উৎপাদন বৃদ্ধির হার ২৩.৫%। আগের বছর ছিল ৭.৫%। খনন ১০.৯%, ২০২১-এর মে মাসে ছিল ২৩.৬%।
মূলধনী পণ্যের উৎপাদনকে দেখা হয় দেশে লগ্নি বৃদ্ধির মাপকাঠি হিসাবে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, মে মাসে সেই শিল্পের ৫৪% বৃদ্ধি চমকপ্রদ। একই রকম চমক দিয়েছে ভোগ্যপণ্যও। বৃদ্ধির হার ৫৮.৫%। শিল্পে ব্যবহৃত প্রাথমিক পণ্যের উৎপাদন বেড়েছে ১৭.৭%। শিল্পোৎপাদন সূচকে যার গুরুত্ব প্রায় ৩৪%।