—প্রতীকী চিত্র।
গত বছর দেশের প্রথম সারির আটটি শহরে আবাসন শিল্পের সার্বিক বিক্রি আগের বছরের তুলনায় ৫% বেড়েছে। চড়া দাম এবং গৃহঋণের সুদের নিরিখে যা মোটের উপর আশাব্যঞ্জক বলেই দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের। তবে সেই সঙ্গে তারা এটাও বলছে, যখন দামের নিরিখে বিক্রিবাটার হিসাব ফ্ল্যাট-বাড়ির আলাদা আলাদা শ্রেণির প্রেক্ষিতে দেখা হবে, তখনই চোখে পড়বে প্রদীপের তলায় আঁধারের ছবি। যা আরও স্পষ্ট করে দিচ্ছে দেশ জুড়ে মাথা তুলতে থাকা আর্থিক বৈষম্যকে। বুধবার উপদেষ্টা সংস্থা নাইট ফ্র্যাঙ্কের সমীক্ষা বলছে, ১কোটি টাকা বা তার চেয়েও দামি ফ্ল্যাটের বিক্রি বেড়েছে। মূলত তার হাত ধরেই বৃদ্ধি হয়েছে সার্বিক ব্যবসার। কিন্তু ৫০ লক্ষ টাকার কম দামি (বাজারে যেগুলিকে সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে থাকা আবাসন হিসেবে ধরা হয়) ফ্ল্যাটের বিক্রি প্রায় ১৬% কমেছে। সেই তালিকায় রয়েছে কলকাতাও।
অতিমারির সময় অনেকটা তলিয়ে গেলেও, পরে বাসস্থানের প্রয়োজন মেটানোই চাহিদার তালিকায় অগ্রাধিকার পায়। ফলে গতি আসে আবাসন ব্যবসায়। কিন্তু চড়া মূল্যবৃদ্ধি ছাপ ফেলে ফ্ল্যাটের দামে। পাশাপাশি মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে টানা রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক মোট ২৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার বাড়ানোয় গৃহঋণের সুদও চড়েছে। সেই সঙ্গে জুড়েছে করোনা উত্তরকালের ক্রমবর্ধমান আর্থিক বৈষম্য। সেগুলিই কম দামি ফ্ল্যাটের চাহিদা ও তার জোগানে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে, জানাচ্ছে নাইট ফ্র্যাঙ্ক।
তাদের সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২২ সালে আবাসনের বাজারে ৩৭% অংশীদারি ছিল ৫০ লক্ষ টাকার কম দামি ফ্ল্যাটের। ২০২৩ সালে তা নেমেছে ৩০ শতাংশে। ২০২২ সালে ১,১৭,১৩১টি এমন ফ্ল্যাট বিক্রি হলেও, গত বছরে তা ছিল ৯৭,৯৮৩। গত বছরে কলকাতায় এমন ৭০১৪টি ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে। সঙ্কোচনের হার ১২%। কলকাতার বাজারে এই ক্ষেত্রের অংশীদারি ৬২% থেকে নেমেছে ৪৭ শতাংশে। আবাসনে দেশের দামি শহরের পাশাপাশি কম দামি ফ্ল্যাটের বাজারও সর্বাধিক মুম্বইতে। তবে সেখানেও ধাক্কা খেয়েছে কম দামিগুলির বিক্রি।
নাইট ফ্র্যাঙ্কের সিএমডি শিশির বৈজলের বক্তব্য, কম দামি ফ্ল্যাটের চাহিদায় কিছুটা ধাক্কা দেখা যাচ্ছে। কারণ, দামি সম্পত্তির দিকে ক্রেতার ঝোঁক বাড়ছে।
সার্বিক ভাবে কলকাতার আবাসনের বাজারে বিক্রি বেড়েছে ১৬%, দাবি সমীক্ষায়। সে ক্ষেত্রে স্ট্যাম্প ডিউটি খাতে ছাড়ের সময়সীমা বার কয়েক সম্প্রসারণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে বলে মনে করছেন সংস্থার পূর্বাঞ্চলের সিনিয়র ডিরেক্টর অভিজিৎ দাস।
অন্য দিকে, কলকাতায় অফিস লিজ় বা ভাড়া নেওয়া ন’বছরের মধ্যে গত বছরে পৌঁছেছিল সর্বোচ্চ স্থানে। নাইট ফ্র্যাঙ্কের হিসাবে, ২০২২ সালের চেয়ে তা বেড়েছে ২০%।