Stamp Duty

তেলের পরে রাজ্যে ছাড় উঠল স্ট্যাম্প ডিউটিতেও, আরও দামি হল ফ্ল্যাট-বাড়ি, খরচ বাড়ল ক্রেতার

২০২১-এর বাজেটে আবাসন ক্ষেত্রে স্বল্প মেয়াদে সম্পত্তি নথিভুক্তির জন্য স্ট্যাম্প ডিউটি-তে ২% ছাড় ঘোষণা করেছিল রাজ্য। কোনও এলাকার সম্পত্তির সরকারি দামও (সার্কল রেট) কমানো হয় ১০%।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪ ০৭:২৭
Share:

শহরের একটি পেট্রল পাম্পে সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ।

লোকসভা ভোট মিটতেই খারাপ খবর। এই মাস থেকে রাজ্যে আগের তুলনায় আরও দামি হয়ে গেল ফ্ল্যাট-বাড়ি এবং পেট্রল-ডিজ়েল। কারণ, এগুলির উপরে রাজ্য সরকার এত দিন যে ছাড় দিত, তা সোমবার থেকে উঠে গেল। ফলে খরচ বাড়ল ক্রেতার।

Advertisement

২০২১-এর বাজেটে আবাসন ক্ষেত্রে স্বল্প মেয়াদে সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশন বা নথিভুক্তির জন্য স্ট্যাম্প ডিউটি-তে ২% ছাড় ঘোষণা করেছিল রাজ্য। কোনও এলাকার সম্পত্তির সরকারি দামও (সার্কল রেট) কমানো হয় ১০%। নবান্ন লিখিত ভাবে জানিয়েছে, ছাড় দু’টি ১ জুলাই থেকে আর কার্যকর থাকছে না। এ দিন থেকে পেট্রল-ডিজ়েলের বিক্রয় করের উপরে ১ টাকা ছাড়ের সুবিধাও প্রত্যাহার করেছে নবান্ন। ফলে এমনিতেই চড়ে থাকা তেলের দাম পশ্চিমবঙ্গবাসীর জন্য আরও কিছুটা মাথা তুলেছে। সোমবার থেকে কলকাতায় আইওসি-র পাম্পে পেট্রল লিটারে ১.০১ টাকা বেড়ে হয়েছে ১০৪.৯৫ টাকা, ডিজ়েল ১ টাকা বেড়ে ৯১.৯৬ টাকা।

ফ্ল্যাট-বাড়ির চাহিদা বাড়াতে বেশ কিছু রাজ্য স্ট্যাম্প ডিউটি-তে ছাড় দিয়ে ভাল সাড়া পেয়েছিল। সেই খাতে খরচ কমায় ক্রেতার ভিড় বেড়েছিল। তাতে শামিল হয়ে অতিমারিতে মন্থর অর্থনীতির পালে হাওয়া দিতে পশ্চিমবঙ্গও স্ট্যাম্প ডিউটি এবং সার্কল রেটে ছাড় দেওয়া শুরু করে ২০২১-এর ৩০ অক্টোবর থেকে। বেশ কয়েক দফায় সুবিধার মেয়াদ বৃদ্ধির পরে ২০২৩-এর ২৯ সেপ্টেম্বর সরকার জানায়, ওই ছাড় কার্যকর থাকবে ৩০ জুন পর্যন্ত। যা শেষ হয়েছে গত রবিবার। অন্য দিকে, বছর কয়েক আগে তেলের দামে বসা বিক্রয়করে কিছুটা ছাড় দিয়েছিল কেন্দ্র। রাজ্যগুলিকে অনুরোধ করেছিল, তারাও যেন এই পদক্ষেপ করে। তবে রাজ্য সরকার অনেক আগে থেকেই পেট্রল-ডিজ়েলে ১ টাকা করে ছাড় দিয়ে আসছে। যা এখন আর থাকল না।

Advertisement

প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের প্রশ্ন, তবে কি রাজ্যের ভাঁড়ারের পরিস্থিতি সত্যিই নড়বড়ে, তাই এই সব ছাড় বহাল রাখা গেল না? যদিও আবাসন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, এই সুবিধা চালুর সময় মানুষের আর্থিক পরিস্থিতি খারাপ অবস্থায় ছিল। তার সরাসরি প্রভাব পড়ছিল আবাসন বিক্রিতে। তাতে রাজ্যের আর্থিক বৃদ্ধির গতিও অনেকাংশে ধাক্কা খায়। এখন আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তাই সেই ছাড় চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন থাকছে না। যদিও তেলের বিক্রয়করে ছাড় নিয়ে নবান্নের একটি সূত্রের অভিযোগ, সেস-এর নামে কেন্দ্র বিপুল টাকা রাজ্য থেকে তুলে নিয়ে যায়। তার কিছু অংশও পাওয়া যায় না। বিরোধীদের অনেকের কটাক্ষ, কেন্দ্র তেলের দাম বাড়ালে সেই সিদ্ধান্তকে ভোট-রাজনীতির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। অথচ লোকসভা ভোট মিটতেই রাজ্য সরকার কার্যত নিঃশব্দে ছাড় প্রত্যাহার করল। তাতেই বাড়ল তেলের দাম।

এক আধিকারিকের বক্তব্য, “অতীতে রাজ্য সরকারই দাবি করেছিল, স্ট্যাম্প ডিউটি এবং সার্কল রেটে ছাড়ের কারণে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়ছে। তবে কি এখন আর সেই সুবিধা পাচ্ছে না সরকার!”

আর্থিক বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করাচ্ছেন, রাজ্যের আয়ের তুলনায় ব্যয় কিছুটা হলেও বেড়েছে। তার উপর ভোটের আগে লক্ষ্মীর ভান্ডারের বরাদ্দ বাড়িয়েছে সরকার। অন্যান্য আর্থিক দায়িত্বও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে তেল থেকে আয় রাজ্যের কাছে খুবই জরুরি। প্রসঙ্গত, বাজেট নথি অনুযায়ী গত অর্থবর্ষের বাজেটে (সংশোধিত) বিক্রয়কর বাবদ রাজ্যের আয় হয়েছিল ১২,২১৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবর্ষে সেই খাতে ১৩,২২৭ কোটি আদায়ের লক্ষ্য রাখা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement