—প্রতীকী চিত্র।
গত অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার ৮.৪% ছোঁয়ার পরে অনেক অর্থনীতিবিদই বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। কেন্দ্রের প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যনের মতো একাংশ আকারে-ইঙ্গিতে পরিসংখ্যানের যথার্থতা নিয়ে প্রকাশ করেন সন্দেহও। বুধবার ষোড়শ অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান অরবিন্দ পানাগড়িয়া তার জবাব দেওয়ায় ফের বিষয়টি নিয়ে চড়ল সুর। সুব্রহ্মণ্যন এতটা চড়া বৃদ্ধিকে ‘রহস্যজনক’ বলেছিলেন। বুধবার এক অনুষ্ঠানে পানাগড়িয়ার পাল্টা উত্তর, ঝাপসা তাঁর চশমার কাচ। তাই একে রহস্যে মোড়া মনে হচ্ছে। এমনকি পাঁচ বছরের মধ্যে আরও কিছু সংস্কারের হাত ধরে বৃদ্ধির হার ৯ শতাংশের কাছে পৌঁছতে পারে বলেও দাবি করেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, ভোটের মুখে থামার নয় এই চাপানউতোর। বিশেষত বিজেপির প্রচারের অন্যতম অস্ত্রই যেহেতু চড়া বৃদ্ধির রথে চেপে অর্থনীতির অগ্রগতি। তবে সম্প্রতি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজনও এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বৃদ্ধির হার উঁচু বলে যে ভাবে ‘ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে’ দেখানো হচ্ছে, তাতে বিশ্বাস করে বিরাট ভুল করছে ভারত।
বিভিন্ন মূল্যায়ন সংস্থার সমীক্ষায় অনুমান ছিল, অক্টোবর-ডিসেম্বরে বৃদ্ধি থাকবে ৬.৫%-৭%। কিন্তু সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রত্যাশা ছাপিয়ে তা হয়েছে ৮.৪%। দেড় বছরে সর্বোচ্চ। এপ্রিল-জুনের হারও সংশোধন করে ৭.৮% থেকে করা হয় ৮.২%। জুলাই-সেপ্টেম্বরে ৭.৬% থেকে বেড়ে হয় ৮.১%। গোটা অর্থবর্ষের পূর্বাভাস বেড়ে হয় ৭.৬%। এই প্রেক্ষিতেই সুব্রহ্মণ্যন বলেন, ‘‘আমি সৎ ভাবেই বলতে চাই, সর্বশেষ জিডিপির হিসাব আমি বুঝতে পারিনি। প্রকৃত শ্রদ্ধা বজায় রেখে এ কথা বলছি। ওই পরিসংখ্যান রহস্যজনক। হিসাবেই আনা যাচ্ছে না। এর অর্থ আমার বোধগম্য হচ্ছে না।’’ প্রাক্তন মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ প্রণব সেন বলেছিলেন, বাজারে চাহিদার পরিস্থিতির সঙ্গে জিডিপির একটা সামঞ্জস্য থাকে। এ ক্ষেত্রে অনেকটা ফারাক থাকছে। সুব্রহ্মণ্যন বক্তব্য ছিল, ‘‘এই পরিসংখ্যানে অনেক কিছুই রয়েছে। তবে আমার তা বোধগম্য হয়নি। আমি বলছি না এই হিসাব ভুল। সেটা অন্যেরা বলবেন।’’
এ দিন পানাগড়িয়ার বার্তা, সমালোচকেরা যদি মনে করেন জিডিপি হিসাবের পদ্ধতিতে ভুল রয়েছে, তা হলে সামনে এসে তা ধরিয়ে দিন। যাতে পরিসংখ্যান নির্ধারণের প্রক্রিয়াকে আরও উন্নত করা নিয়ে আলোচনা করা যায়। তবে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন পূর্বতন ইউপিএ সরকারকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, জিডিপি হিসাব করার পদ্ধতিগত বদল হয়েছে মোদী সরকারের আমলে। কিন্তু সেই সুপারিশ করেছিল পূর্বতন সরকারের প্রশাসনের নিয়োগ করা কমিটি। অথচ তাদের কেউ প্রশ্ন করছে না।