প্রতীকী ছবি।
অভিযোগ বিস্তর। কেউ বলেন মোবাইলের মাসুল না-ফুরোলেও পরিষেবা ঠিক মতো মিলছে না। কারও বিরক্তি, কোথা দিয়ে কত খরচ হচ্ছে, মাসুল হিসেবে কত টাকা কাটা হচ্ছে ও রয়ে যাচ্ছে, ডেটার পিছনে কত লাগছে— সবটাতেই যেন ধোঁয়াশা। ডেটার গতি সংস্থার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মিলছে না বলেও মোবাইল সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে নালিশ জানান গ্রাহকদের একাংশ। মাসুল সমেত ফোনের বিভিন্ন খরচ ও প্রতিশ্রুতি মতো সমস্ত পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে এমন বহু অস্বচ্ছতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বছর বিষয়টি নিয়ে সব পক্ষের মতামত চেয়েছিল টেলিকম নিয়ন্ত্রক ট্রাই। যার উপরে ভিত্তি করে শুক্রবার গ্রাহক পরিষেবা সংক্রান্ত সংশোধিত নিয়ম ঘোষণা করল তারা।
ট্রাই বলেছে, এ বার থেকে টেলিকম সংস্থাগুলিকে বাধ্যতামূলক ভাবে সব কিছু স্পষ্ট ও স্বচ্ছ ভাবে জানাতে হবে। যাতে গ্রাহক ফোনের সমস্ত খরচ ও পরিষেবার খুঁটিনাটি জলের মতো বুঝতে পারেন। নিশ্চিত হন, তাঁদের থেকে সংস্থা লুকিয়ে কোনও চার্জ নিচ্ছে না। ডেটা হোক বা কথা বলার মাসুল, পরিষেবা মিলছে প্রতিশ্রুতি মতোই। ট্রাইয়ের ফরমান, সংস্থার বিজ্ঞাপনে হোক বা পরিষেবা বিক্রির সময়, প্রতিটি ক্ষেত্রে গ্রাহকেরা যাতে সহজ ভাবে সবটা বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করতেই নিয়মে এই বদল।
পোস্টপেড বিলের অঙ্ক ও টাকা মেটানোর সময় নিয়ে ধোঁয়াশার অভিযোগ বহু গ্রাহকের। অনেকেই বলেন, মোবাইলের টাকা নির্ধারিত সময়ের আগে ফুরোয়, সংস্থার কথা মতো পুরো ডেটা মেলে না, ফোর-জি সংযোগেও ডেটা আপলোড বা ডাউনলোড করার সময় পর্দায় চাকা ঘুরেই চলে। তাঁদের দাবি, অনেক শর্ত লুকিয়ে থাকে, পরিষেবা বিক্রির সময়ে খোলসা করা হয় না। একমত ট্রাইও। তাদের পর্যবেক্ষণ, বর্তমানে চালু পদ্ধতি যতটা স্বচ্ছ হওয়া দরকার, ততটা নয়। বিশেষত ওয়েবসাইটের একই পর্দায় বহু মাসুল হার লেখা থাকায়, প্রয়োজন তথ্য হারিয়ে যায়। গ্রাহক বুঝতে পারেন না।
ট্রাইয়ের নতুন নির্দেশ
• মোবাইলের বিভিন্ন মাসুল, ফি-সহ পরিষেবার সব তথ্য এখন স্পষ্ট নয়। সংস্থাগুলির সেই নীতি সংশোধন করা জরুরি।
• পোস্টপেড ও প্রিপেড গ্রাহকদের স্পষ্ট ভাবে বলতে হবে সংশ্লিষ্ট সার্কলের মাসুল। ফোনে কথা বলা, ডেটা ও এসএমএসের মাসুল, ব্যবহারের সীমা ও সীমা পেরোলে বাড়তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কী শর্ত, সবই সংস্থাগুলির স্বচ্ছ ভাবে জানানো বাধ্যতামূলক।
• নিশ্চিত করতে হবে কোনও পরিষেবার ক্ষেত্রে টাকা যেন লুকিয়ে নেওয়া না-হয়।
• কাস্টমার কেয়ার সেন্টার (গ্রাহক সেবা কেন্দ্র), সিম বিক্রির বিপণি, অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে মাসুলের বিস্তারিত তথ্য জানাতে হবে ১৫ দিনের মধ্যে।
• পরিষেবা নিতে গোড়ার খরচ, যেমন, কত টাকা জমা রাখতে হবে, অগ্রিম ভাড়া কত, পোস্টপেড সংযোগের ফি কত ইত্যাদি স্পষ্ট ভাবে প্রকাশ করতে হবে।
• পরিষ্কার বলতে হবে বিশেষ ভাউচার, টপ আপ, অ্যাড অন প্যাক ইত্যাদির তথ্য।
• এক একটি মাসুল হারে পরিষেবা কতদিন চালু থাকবে (ভ্যালিডিটি), বিল মেটানোর শেষ দিন কবে, সেটা জানানোর ভাষাও সহজ হতে হবে।
• গ্রাহক যেন বুঝতে পারে ডেটার গতি হিসেবে কী প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে।
• গ্রাহক যাতে সবটা জেনে-বুঝে তাঁর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
সংস্থাগুলিকে ১৫ দিনের মধ্যে স্পষ্ট ভাবে সব কিছু জানাতে বলেছে ট্রাই। নিয়ম মানা হচ্ছে কি না, তা-ও জানাতে হবে প্রতি ত্রৈমাসিকের শেষে পরের মাসের ৭ তারিখের মধ্যে।