প্রখর তাপে চাতক পাখির দশা চা পাতার কুঁড়িরও। প্রতীকী ছবি।
প্রখর তাপে চাতক পাখির দশা চা পাতার কুঁড়িরও।
চা শিল্পের দাবি, গ্রীষ্মের তীব্র তাপপ্রবাহে কার্যত পুড়ছে উত্তরবঙ্গের বাগান। গত মাসে কিছুটা বৃষ্টির পরে আর তার দেখা নেই ডুয়ার্স, তরাই ও দার্জিলিঙে। পাল্লা দিয়ে চড়ছে তাপমাত্রার পারদ। আমজনতার মতোই যেন হাঁসফাঁস অবস্থা চা গাছগুলির। মরসুমের শুরুতে বাজারে এই সময়ের ‘ফার্স্ট ফ্লাশ’ বলে পরিচিত চায়ের উৎপাদনে এই প্রতিকূল আবহাওয়ায় ধাক্কা লাগতে শুরু করেছে। আশঙ্কা চায়ের গুণমান খারাপ হওয়ারও। শিল্পমহলের ধারণা, এই অবস্থা আরও কিছু দিন চললে প্রবল চাপ তৈরি হবে শিল্পের অন্দরে। বৃষ্টি হলেও ইতিমধ্যেই হওয়া ক্ষতি কতটা পূরণ করা যাবে, তা নিয়ে সংশয়ে তারা।
দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান উপদেষ্টা সন্দীপ মুখোপাধ্যায় এবং ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি সুজিত পাত্রর বক্তব্য, অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। সন্দীপবাবু জানান, বৃষ্টির অভাবে এ বার এখনও পর্যন্ত ‘ফার্স্ট ফ্লাশ’ চায়ের উৎপাদন ১৫-২০ শতাংশ কমেছে। গরমে কর্মীরাও ঠিক মতো কাজ করতে পারছেন না। তার উপর রফতানি বাজারে কমছে দার্জিলিং চায়ের চাহিদা। কারণ, অর্থনীতিতে ঝিমুনির জন্য ইউরোপের অনেক দেশে একই চা পাতা দু’বার ফুটিয়ে খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। সুজিতবাবুর দাবি, গত বছর উত্তরবঙ্গে চায়ের উৎপাদন নজির গড়েছিল। এ বার সংশয় বাড়াচ্ছে আবহাওয়া। গত মাসে দার্জিলিঙের উৎপাদন অনেকটা কমেছে। ডুয়ার্স-তরাইতে তা প্রায় গত বারের মতোই ছিল। কিন্তু এপ্রিলে আবহাওয়ার উন্নতি না হলে সব মিলিয়ে উৎপাদন মার খেতে পারে।
টি রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন (টিআরএ) জানাচ্ছে, চড়া তাপমাত্রা এবং বাতাসে আর্দ্রতার অভাব পাতার কুঁড়ির বৃদ্ধিকে আটকে দিচ্ছে। নতুন পাতা না হলে চায়ের গুণমানে প্রভাব পড়বে। ডুয়ার্সে এই অবস্থা আরও এক সপ্তাহ চললে ‘সেকেন্ড ফ্লাশ’ চায়ের উৎপাদনও মার খাবে। তরাই এলাকায় তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ানোয় গাছে সালোকসংশ্লেষের হার কমছে। তা ৪২ ডিগ্রি হলে সালোকসংশ্লেষ কার্যত হবেই না। তাই গাছের উপরে আচ্ছাদন তৈরির পরামর্শ দিয়েছে তারা। টিআরএ-র মতে, দার্জিলিঙের বাগানে গরমের চেয়েও বড় সমস্যা বৃষ্টি না হওয়া। তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ ডিগ্রি বেশি। বৃষ্টির অভাবে বাতাসের আর্দ্রতা কমেছে। ফার্স্ট ও সেকেন্ড ফ্লাশ মিলিয়ে উৎপাদন ৩৫%-৪০% ধাক্কা খেতে পারে।