মনের অসুখ সারানোর দাওয়াই বাতলিয়েই এ বার ব্যবসায় নেমেছে বেশ কিছু স্টার্ট-আপ (নতুন) সংস্থা। এবং তা-ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা থেকে শুরু করে সন্তান পালনের খুঁটিনাটি। প্রযুক্তির হাত ধরে দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান খুঁজে দিতে হালে জন্ম হচ্ছে নিত্যনতুন ব্যবসার। সেখানে এ বার পা মানসিক সমস্যারও।
কয়েক বছর ধরেই তৈরি হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন স্টার্ট-আপ। যারা অনলাইনে খুঁজে দিচ্ছে সমস্যা থেকে বার হওয়ার পথ। যেমন, বেঙ্গালুরুর ইওর দোস্ত, গুড়গাঁওয়ের ইসাইক্লিনিক ও হেলথ্ ই-মাইন্ডস, মুম্বইয়ের টাইপ এ থট, আমদাবাদের ওমানিয়া ইত্যাদি।সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, আজকের সদাব্যস্ত জীবনে মনের সমস্যা বাড়ছে। তেমনই কিছুটা হলেও বাড়ছে তা নিয়ে সচেতনতা। সেই কারণে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হচ্ছে ওই সমস্ত সদ্যজাত সংস্থারও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) তথ্য বলছে, ২০১৫ সালে ১৫% ভারতীয় অবসাদে ভুগেছেন। কেন্দ্রের হিসেব, প্রতি পাঁচ ভারতীয়ের এক জনের মানসিক সমস্যা আছে। ২০১৪ সালে ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামে হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের পেশ করা নথি অনুযায়ী, ভারতে মানসিক সমস্যায় আর্থিক ক্ষতির অঙ্ক ১.০৩ লক্ষ কোটি ডলার। যা কার্ডিওভাস্কুলারের মতো ঘরে ঘরে ছড়িয়ে যাওয়া রোগজনিত ক্ষতির প্রায় অর্ধেক!
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, সমস্যা যত ব্যাপক, সমাধান তেমন সহজলভ্য নয়। প্রতি দু’লক্ষ জনের জন্য এক জন মনোরোগ চিকিৎসক মেলে। আর এই ঘাটতিই পোক্ত করে দিচ্ছে অনলাইনে মানসিক সমস্যা সমাধানের স্টার্ট-আপগুলির ভিত। অনেক ক্ষেত্রে আবার তার বীজ বুনেছে সংস্থার জন্মদাতার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। আইআইটি-গুয়াহাটি থেকে পাশ করা রিচা সিংহর বন্ধু পড়াশোনার চাপ ও প্রত্যাশা মতো চাকরি না-পাওয়ার আশঙ্কায় আত্মহত্যা করেছিলেন। এ ঘটনা ক্রমাগত তাড়া করেছে রিচাকে। ২০১৪ সালে জন্ম নিয়েছে ইওর দোস্ত। রিচার দাবি, এখনও সমাজ ও লোকলজ্জার ভয়ে বেশির ভাগ মানুষ মানসিক সমস্যা গোপন করেন। তা দূর করতেই অনলাইন চ্যাট ও ভিডিও কাউন্সেলিং চালু করেন রিচা। রোগীর পরিচয় গোপন রাখার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। রিচার দাবি, তাঁদের গ্রাহক ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে। প্রতি মাসে বাড়ছে ৪০% করে।
গুড়গাঁওয়ের শিপ্রা দাভর বিদেশে পড়ার সময় অবসাদগ্রস্ত হন। দেশে ফিরে দেখেন, মনের অসুখ লুকিয়েই দিন কাটান অনেকে। ১৫ জন মনোবিদ ও চারজন মনোরোগ চিকিৎসক নিয়ে তৈরি হয় ইসাইক্লিনিক।
সম্ভাবনা দেখে এ ধরনের স্টার্ট-আপে পুঁজি ঢালছেন লগ্নিকারীরাও। ইওর দোস্ত পেয়েছে আড়াই কোটি টাকা। লগ্নি করেছেন রেডবাস ডট কম ও ট্যাক্সি ফর শিওরের প্রতিষ্ঠাতারা।
বেঙ্গালুরুর হেলথ্ ই-মাইন্ডসের অঙ্কিতা পুরী ও মুম্বইয়ের টাইপ এ থটের অজট ফাদকের দাবি, সচেতনতা বাড়লেও সমাধান এখনও তলানিতে। বিশেষত ছোট শহর ও গ্রামাঞ্চলে। স্টার্ট-আপ মহলের মতে, ফোন মারফত নেট পরিষেবা বাড়লে সেই ঘাটতি কিছুটা মিটবে।