—প্রতীকী চিত্র।
মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার বাড়ালেও, ব্যাঙ্কগুলি এখনও তা পুরোপুরি কার্যকর করেনি— সম্প্রতি ঋণনীতি পর্যালোচনায় বলেছিলেন আরবিআই গভর্নর শক্তিকান্ত দাস। এ বার সূত্রের খবর, সেই কাজে কোমর বেঁধে নেমেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। তারা চাইছে বর্ধিত রেপো রেট (যে সুদে ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয় আরবিআই) অনুযায়ী ঋণের মতো সব রকম আমানতেও সুদ দ্রুত বাড়াক ব্যাঙ্কগুলি। ঋণের ক্ষেত্রে আগেই তা কার্যকর হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ব্যাঙ্কে ঋণগ্রহীতাদের ধার শোধের কিস্তি (ইএমআই) বিপুল বেড়েছে। বেশ খানিকটা বেড়েছে স্থায়ী আমানত বা ফিক্সড ডিপোজ়িটের সুদের হারও। কিন্তু ব্যাঙ্কের সেভিংস অ্যাকাউন্টে জমা টাকায় সুদ এখনও নামমাত্র। রেপো বৃদ্ধির প্রভাব তাতে পড়েনি।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের বার্তা বাস্তবায়িত হলে উপকৃত হবেন সাধারণ মানুষ। সেভিংস অ্যাকাউন্টে জমা টাকায় বেশি সুদ সেই টাকাকে আরও একটু বাড়তে সাহায্য করবে। তবে কবে এই বিষয়টি কার্যকর হবে বা কোনও নির্দিষ্ট নির্দেশ ছাড়া আদৌ কার্যকর হবে কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞদের একাংশেরও মত, কম খরচে তহবিল সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে সেভিংস অ্যাকাউন্ট ব্যাঙ্কগুলির অন্যতম হাতিয়ার। তাই শীর্ষ ব্যাঙ্কের নির্দেশ কার্যকর হওয়া কঠিন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি ব্যাঙ্কের এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলেন, “সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে পরিচালনা এবং প্রযুক্তিগত খরচ বেশি। সেখানে ২০ থেকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ বাড়ানো হলে তা বড় মাপের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে খরচের ক্ষেত্রে।’’ সেভিংস অ্যাকাউন্টে সুদের হার কম থাকায় সুদ বাবদ ব্যয়ের থেকে আয় বেড়েছে। ব্যাঙ্কগুলির মুনাফা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যার ভূমিকা রয়েছে। এ বার সেভিংসে সুদের হার বাড়লে তার নেতিবাচক প্রভাব মুনাফায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান ওই আধিকারিক।
চড়া মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরাতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক গত বছর মে মাস থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ২৫০ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট বাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঋণের পাশাপাশি ব্যাঙ্কগুলি সব রকম জমায় সেই বৃদ্ধির প্রভাব পৌঁছে না দিলে আরবিআইয়ের উদ্দেশ্য সফল হওয়া কঠিন।
বস্তুত, এক সময়ে যখন রেপো রেট কমার জন্য সুদ কমার জমি তৈরি হয়েছিল, তখনও বহু ব্যাঙ্ক ঋণে তা ঠিক মতো কমাচ্ছিল না। সেই সময়ে গৃহঋণ-সহ কিছু ঋণকে রেপো রেটের সঙ্গে যুক্ত করেছিল রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। ফলে রেপো বৃদ্ধি বা হ্রাসের সঙ্গে তাল রেখে ওই সব ঋণে চটজলদি সুদও ওঠানামা করত। এ বারও রেপো রেট বাড়ার পরে ঋণে এবং মেয়াদি আমানতে সুদ বেড়েছে। কিন্তু সেভিংসে তা হয়নি। তার উপর সেভিংস অ্যাকাউন্টে সুদ এমনিতেই কম। বেসরকারি ব্যাঙ্কের থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে আরও কম। বর্তমানে বড় বেসরকারি ব্যাঙ্কে সুদ যেখানে ৩%-৪.৫০%, সেখানে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে তা ২.৭০%-৪%।
ব্যাঙ্কিং মহলের একাংশ বলছে, রেপো রেটের সঙ্গে যুক্ত থাকা ঋণে সুদ বাড়ায় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক গত বছর মে মাস থেকে যতটা সুদের হার বাড়িয়েছিল, তার সিংহভাগই ব্যাঙ্কগুলি কার্যকর করেছে। শুধু সেভিংসেই তা হয়নি। বেশ কিছু বেসরকারি ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, সেভিংস অ্যাকাউন্টে সুদ বাড়ানোর পরিকল্পনা আপাতত তাদের নেই।