প্রতীকী ছবি।
যে কোনও যুদ্ধের দু’টো দিক, সামরিক এবং অর্থনৈতিক। এক দিকে যখন গুঁড়িয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন, অন্য দিকে তখন গভীর ক্ষত তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে। বাদ যাচ্ছে না রাশিয়াও। এই আঘাতের ঢেউ ভারতেও স্পষ্ট এবং ভবিষ্যতের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগজনক। ফলে প্রতি দিনই দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে শেয়ার বাজার। গত সপ্তাহের শেষ তিন দিনে ১৯১৩ পয়েন্ট খুইয়ে সেনসেক্স নেমেছে ৫৪,৩৩৪ অঙ্কে, যা সূচকটির সর্বোচ্চ জায়গা থেকে প্রায় ৮০০০ নীচে। এখনও পর্যন্ত বাজার পড়েছে ১২%। পতন জারি থাকতে পারে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে। আশার দিক একটাই, ফের সুদ বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে ব্যাঙ্কের আমানতে। এমনকি এপ্রিলের শুরুতে স্বল্প সঞ্চয়েও সুদ বাড়ানো হতে পারে প্রকল্পগুলিকে আকর্ষণীয় করে তুলে লগ্নি টানার জন্য।
যুদ্ধ শুরুর আগেও যে ভারতীয় অর্থনীতি খুব ভাল জায়গায় ছিল, তা নয়। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান ঘোষণার আগে টানা ছ’দিন নেমেছিল সেনসেক্স। পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, সুদ বাড়ার সম্ভাবনা, বিশ্ব বাজারে নাগাড়ে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি অস্বস্তিতে রেখেছিল কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রককে। ঘেঁটে যেতে বসেছিল বাজেটে কষা নানা অঙ্ক। ইউক্রেনে যুদ্ধ এই সব আশঙ্কায় ঘি ঢালায় প্রতি দিন তীব্র থেক তীব্রতর হচ্ছে সঙ্কট। রাশিয়া কোথায় থামবে এবং সংঘাত কবে শেষ হবে তার ইঙ্গিত নেই। অর্থাৎ সামনের দিনগুলি নিয়ে আশার কথা শোনাতে পারছেন না কেউই।
শেয়ার বাজার ও ফান্ডের ন্যাভ এরই মধ্যে অনেকটা নামায় দুশ্চিন্তায় আছেন ভারতের লগ্নিকারীরা। মার্চে আমেরিকায় সুদ বাড়ার কথা। যে কারণে নাগাড়ে বিদেশি লগ্নি সরে গিয়ে আরও দুর্বল করে তুলছে বাজারকে। ভারতেও বন্ডের ইল্ড ফের বেড়ে হয়েছে ৬.৮১%, যা বাজেটের পরে ৬.৬৬ শতাংশে নেমেছিল সরকার কিছু পদক্ষেপ করায়। যে কারণে ডলাররের সাপেক্ষে টাকায় দাম পড়ছে। এক ডলারের দাম ছাড়িয়েছে ৭৬ টাকা।
বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুড যে জায়গায় (ব্যারেলে ১১৮ ডলারের উপরে), তাতে সম্ভবত কয়েক দিনের মধ্যেই ভারতে বাড়বে পেট্রল-ডিজ়েলের দর। ফলে লাগামছাড়া হতে পারে জিনিসপত্রের দামও। তখন সুদ বাড়ানো ছাড়া কোনও বিকল্প থাকবে না রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে। অথচ সুদ বাড়ানো হলে সবে প্রাণ ফিরতে শুরু করা বিভিন্ন শিল্পে আবার মন্দার মেঘ দেখা দিতে পারে। মার্চের মধ্যে এলআইসির আইপিও (মূলধন জোগাড়ের জন্য বাজারে প্রথম বার শেয়ার বিক্রি) আনা না-গেলে রাজকোষ ঘাটতিও চওড়া হবে। অর্থাৎ সমস্যার শৃঙ্খল ক্রমশই কঠিন হয়ে উঠছে ভারতের মতো দেশের কাছে।
এই পরিস্থিতিতে কী করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না লগ্নিকারীরা। অনিশ্চয়তার দুনিয়ায় অনেকেই টাকা ঢালছেন সোনা-রুপোতে। ফলে ইতিমধ্যেই চড়েছে সেগুলির দাম। স্থির আয় প্রকল্পের লগ্নিকারীদের আশা কিছু দিনের মধ্যেই ব্যাঙ্ক, ডাকঘর ও অন্যত্র সুদের হার বাড়বে। বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার বাজার থেকে যে বিপুল অঙ্ক ঋণ করবে, তার অনেকটাই আসবে পিপিএফ, এনএসসি, সুকন্যা সমৃদ্ধি, কিসান বিকাশের মতো স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের আমানত থেকে। প্রকল্পগুলিকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হলে সুদ বাড়াতে হবে। সেই হার পুনর্বিবেচনা করা হবে ১ এপ্রিল।
আগামী বৈঠকে সুদের হার বাড়ানোর কথা ভাবতে পারে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কও। অর্থাৎ যাঁরা তহবিল হাতে নিয়ে বসে, তাঁরা আর ক’দিন অপেক্ষা করে দেখতে পারেন ব্যাঙ্ক আমানতে সুদ বাড়ে কিনা দেখার জন্যে। যা অনেকের কাছেই ভরসার সঞ্চয়। সব যুদ্ধের মতো এই যুদ্ধও এক দিন থামবে। পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য রেখে ঝুঁকি নিতে রাজি, এমন লগ্নিকারীরা প্রতিটি পতনে একটু করে ভাল শেয়ার সংগ্রহ করতে পারেন। একই কথা খাটে একুইটি ফান্ড, মানে শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডে লগ্নিকারীদের ক্ষেত্রেও।
বর্তমান বাজারে ডিভিডেন্ড ইল্ড ফান্ড লগ্নির আদর্শ জায়গা হতে পারে। একই কারণে কম দামে পেলে উঁচু ডিভিডেন্ড প্রদানকারী ভাল শেয়ারে লগ্নি লাভজনক। যত দিন পর্যন্ত দাম না-বাড়ে তত দিন পর্যন্ত ডিভিডেন্ড বাবদ আয় সেভিংস ব্যাঙ্ক সুদের চেয়ে বেশি হলে তা মানা যেতে পারে।
(মতামত ব্যক্তিগত)