প্রতীকী ছবি
কাঁচা পাটের অভাবে বহু দিন ধরে বরাত হাতছাড়া হচ্ছে চটকলগুলির। আগামী দিনেও যে তা হতে চলেছে, তা স্পষ্ট হল আগামী অর্থবর্ষে চটের বস্তার চাহিদার বহরে। আর তাকে ঘিরেই ফের সামনে এল চটকল এবং সরকারি মহলের মতান্তর।
সরকারের অনুমান, ২০২২-২৩ সালে শস্য ভরতে প্রয়োজন পড়বে প্রায় ৪৬ লক্ষ বেল চটবস্তার। এক বেল মানে ৫০০টি বস্তা। অনুমান সত্যি হলে খোঁজ পড়বে প্রায় ২৩০ কোটি বস্তার। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল কেন্দ্রীয় ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রক এবং খাদ্য ও গণবণ্টন মন্ত্রক। কিন্তু চটশিল্পের দাবি, এই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। কারণ, বাজারে কাঁচা পাটের জোগান এতই কম যে অত বস্তা তৈরিই করতে পারবে না চটকলগুলি। ফলে ফের বস্তার বিপুল ঘাটতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সূত্রের খবর, বৈঠকে ঘাটতির জন্য চটকলগুলিকে দায়ী করে সরকারি মহল। দোষ দেয় মিলগুলির কম উৎপাদন ক্ষমতা, মান্ধাতার আমলের যন্ত্রপাতি আধুনিক করে না-তোলা এবং উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা না-করাকে। কিন্তু চটকল মালিকদের সংগঠন আইজেএমএ-র আধিকারিকদের ক্ষোভ, কোনও সরকার কাঁচা পাটের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে না। যেটা এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার প্রধান কারণ।
জুট কমিশনার মলয় চন্দন চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘কাঁচা পাটের কোনও অভাব নেই। কিন্তু তা বেআইনি ভাবে মজুত করা হচ্ছে। ফলে কৃত্রিম ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে তার দামও চড়া। সকলে কিনতে পারছে না।’’ ওই মজুত করা পাট উদ্ধারের জন্য শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। তবে চটকল কর্মীদের একাংশের ক্ষোভ, বেআইনি মজুত বন্ধ করার কথা বহু দিন ধরেই বলা হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি এখনও। এআইইউটিইউসি অনুমোদিত বেঙ্গল জুট মিলস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি দিলীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পাটের ফলন ভাল হওয়া সত্ত্বেও বাজারে তার অভাব দুর্ভাগ্যজনক। কিছু লোক তা মজুত করায় সমস্যা হচ্ছে। জুট কমিশনার দীর্ঘ দিন ধরে বলছেন তিনি কাঁচা পাট উদ্ধার করবেন, কিন্তু এখনও কিছু হয়নি। আমরা অবিলম্বে মজুত পাট উদ্ধারের অভিযানে নামার দাবি জানাচ্ছি।’’
কর্মী ইউনিয়নগুলির দাবি, পাটের মজুত না-রুখতে পারলে চটকলগুলি আর্থিক ভাবে দুর্বল হতে থাকবে। এই শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা কোনও কাজেই লাগবে না। চটকল মালিকেরা বলছেন, ‘‘হয় সরকার পাটের সরবরাহ ব্যবস্থা মজবুত করুক, নয়তো চটবস্তারদাম বাড়াক।’’
উল্লেখ্য চলতি অর্থবর্ষে খরিফ মরসুমের শস্য ভরতেও কেন্দ্র ২৫ লক্ষ বেল বস্তা চেয়েছিল। আইজেএমএ প্রথমে জানায় তারা ১৮ লক্ষ বেল দিতে পারবে। পরে তা আরও কমিয়ে ১৬ লক্ষ করে দেয়।