Ashokenagar

তেল প্রকল্পে ক্ষতিপূরণ, কর্মসংস্থান নিয়ে আলোচনা

পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই ৪ একক জমির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। আরও ১০.৪৯ একক জমি দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

অশোকনগর শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২১ ০২:১৬
Share:

চিহ্নিত: প্রকল্পের সামনে এই জমিই চেয়েছে ওএনজিসি। অশোকনগরের বাইগাছিতে। ছবি: সুজিত দুয়ারি।

অশোকনগরে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস প্রকল্প থেকে ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারকে ১৮ লক্ষ টাকা রয়্যালটি দিয়েছে ওএনজিসি কর্তৃপক্ষ। বুধবার এ কথা জানিয়েছেন অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার পুরপ্রশাসক প্রবোধ সরকার। মঙ্গলবার তিনি ওএনজিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। সেখানে প্রকল্পের বেসিন ম্যানেজার সহ ওএনজিসি কর্তৃপক্ষের তরফে ৮ জন প্রতিনিধি ছিলেন।

Advertisement

প্রবোধ জানান, ওএনজিসি কর্তৃপক্ষকে মুখ্যমন্ত্রী বিনামূল্যে জমি দিতে চেয়েছেন। ওএনজিসি কর্তৃপক্ষ ৪০ একক জমির জন্য রাজ্যকে ১৮ কোটি টাকা দিতে চেয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী টাকা নেননি। তিনি বিনামূল্যে জমি দেবেন। তবে জমির জন্য মুখ্যমন্ত্রী ওএনজিসি কর্তৃপক্ষ কাছ থেকে এক টাকা নেবেন বলে জানিয়েছেন।’’

পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই ৪ একক জমির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। আরও ১০.৪৯ একক জমি দেওয়া হচ্ছে। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে ওএনজিসি কর্তৃপক্ষকে সব রকমের সাহায্য তাঁরা করবেন বলে জানিয়েছেন। প্রবোধ বলেন, ‘‘এখানে তেল-গ্যাস দু’টোই পাওয়া গিয়েছে। তেল হলদিয়ায় শোধিত করা হয়েছে। তেল অত্যন্ত উন্নতমানের। পুরপ্রশাসক জানান, তেলের ক্ষেত্রে রাজ্যকে ১০ শতাংশ এবং গ্যাসের ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ রয়্যালটি দেবে ওএনজিসি। তবে পুর কর্তৃপক্ষ কোনও রয়্যালটি পাবেন না বলে ওএনজিসি এ দিন জানিয়ে দিয়েছে বলে জানান পুরপ্রশাসক। যদিও তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্য সরকার রয়্যালটি পেলেও আমাদের লাভ। এখানে অনুসারি শিল্প গড়ে উঠবে। কর্মসংস্থান হবে। ৩৪ বছরে এখানকার সব শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমরা তেল ও গ্যাস প্রকল্পের মাধ্যমে অশোকনগরকে নতুন করে সাজিয়ে তুলব। ওএনজিসি কর্তৃপক্ষ ও পুরসভা এক সঙ্গে কাজ করবে।’’

Advertisement

পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, অশোকনগরের বাইগাছি এলাকায় তেল ও গ্যাস প্রকল্প সম্পর্কে পুর কর্তৃপক্ষ অন্ধকারে ছিলেন। প্রকল্প সম্পর্কে জানতে এবং ক্ষতিপূরণ, কর্মসংস্থান কী ভাবে হবে তা জানতে চেয়ে ওএনজিসি কর্তৃপক্ষকে দিন কয়েক আগে চিঠি দিয়েছিলেন পুরপ্রশাসক। আলোচনায় বসতেও চেয়েছিলেন। সেই মতো মঙ্গলবার বৈঠক হয়।

আলোচনায় পরে প্রবোধ বলেন, ‘‘ওএনজিসি কর্তৃপক্ষকে বলেছি, আপনাদের কাছ থেকে আমরা কিছু চাই না। কেবল আপনারা প্রকল্প নিয়ে কী পদক্ষেপ করছেন, তা আমাদের জানাবেন। কারণ, মানুষ তা আমাদের কাছে জানতে চান। আমরা কোনও উত্তর দিতে পারি না। ওএনজিসি কর্তৃপক্ষ কথা দিয়েছেন, ভবিষ্যতে কর্মসংস্থান-সহ যাবতীয় পদক্ষেপ সম্পর্কে আমাদের অবগত করবেন।’’

প্রকল্প এলাকায় যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে চাষাবাদ করছেন, তাঁদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিয়েও এ দিন আলোচনা হয়েছে। পুরপ্রশাসক বলেন, ‘‘ওই অঞ্চলে কারও ব্যক্তিগত জমি যদি প্রকল্পের জন্য দিতে হয়ে থাকে, তা হলে তাঁরা যাতে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পান, সে জন্য সমস্ত রকম লড়াই করব। কৃষকেরা যাতে ক্ষতিপূরণ পান, সেটা আমরা অবশ্যই দেখব। ওএনজিসি কর্তৃপক্ষও আমাদের জানিয়েছেন, প্রকল্প এলাকায় যদি কারও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থাকে, তা হলে তাঁকে সরকারি দরে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’’

যদিও পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, বর্তমান প্রকল্প এলাকায় থাকা সমস্ত জমিই সরকারি। ওই জমিতে চাষাবাদ করা মানুষজন অবশ্য দাবি করেছেন, সরকারি জমি হলেও তা উদ্বাস্তুদের চাষ করার জন্য দেওয়া হয়েছিল। তারপরে কয়েকবার হাতবদল হয়েছে। সে সব নথিপত্র তাঁদের আছে। এ ছাড়া ওই জমিতে চাষাবাদ করেই তাঁদের সংসার চলত। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি না হলেও তাঁরা চাষাবাদ করতেন। প্রবোধ বলেন, ‘‘চাষাবাদ করা মানুষজন আমাদের কাছে আবেদন করলে তা আমরা সরকার এবং ওএনজিসি কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেব।’’

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকে পুরপ্রশাসক ওএনজিসি কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছেন, প্রকল্প নিয়ে ইতিমধ্যেই দলবাজি শুরু হয়েছে। প্রকল্পে কাজ দেওয়ার নাম করে ইতিমধ্যেই বাজারে আবেদনপত্র ছাড়া হচ্ছে। প্রবোধ বলেন, ‘‘ওএনজিসি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি, তাঁরা যেন সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়ে দেন, এ ভাবে প্রকল্পে কাজ হবে না। ওঁরা রাজি হয়েছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement