Central Government

শর্তেই সমস্যা, নালিশ ছোট শিল্পের 

সরকারি সূত্রের খবর, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে চললেও এখনও পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ৬৫% ঋণ মঞ্জুর হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২০ ০৩:৩৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

করোনার কারণে সঙ্কটে পড়া ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি সংস্থাগুলির (এমএসএমই) জন্য ৩ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এ মাসের পরে সেই এমার্জেন্সি ক্রেডিট লাইন গ্যারান্টি স্কিমের আর মেয়াদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা কার্যত নেই বলে সরকারি সূত্রের ইঙ্গিত। শিল্প মহলের একাংশের মতে, মেয়াদ বৃদ্ধির প্রয়োজনও নেই।

Advertisement

কারণ, প্রকল্পের শর্তের ফাঁকে এমনিতেই সুবিধা থেকে বাদ গিয়েছে বহু সংস্থা। আগ্রহীদের অনেকে আবার পদ্ধতিগত জটিলতায় শেষ পর্যন্ত ঋণ পায়নি। ফলে যে সুরাহার আশা করা হয়েছিল, প্রকল্প এনেও তা মেলেনি। ফলে প্রকল্পটি এমএসএমই, বিশেষত ক্ষুদ্র ও ছোট সংস্থাগুলির পক্ষে খুব একটা সহায়ক হয়নি বলে তাদের দাবি।

১ অগস্ট কেন্দ্র জানিয়েছিল, ২৯ ফেব্রুয়ারি যে সব ছোট সংস্থার বকেয়া ঋণ সর্বোচ্চ ৫০ কোটি টাকা, তাঁরাও প্রকল্পে নাম লেখানোর যোগ্য। শুরুতে এই ঊর্ধ্বসীমা ছিল ২৫ কোটি। সে দিনই বলা হয়, ডাক্তার, আইনজীবী ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের মতো পেশাদারেরাও ব্যবসার জন্য এই ঋণ পাবেন। গ্যারান্টিযুক্ত সর্বোচ্চ ঋণের অঙ্ক ৫ কোটি থেকে বেড়ে হয় ১০ কোটি টাকা। শুরুতে বলা হয়েছিল ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বার্ষিক ব্যবসা হলে সংস্থা এর সুবিধা নিতে পারবে। পরে সেটাও বেড়ে ২৫০ কোটি হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: বস্তা তৈরি বাড়ানোর নির্দেশ চটকলগুলিকে​

আরও পড়ুন: গৃহঋণে সুদ কমাল স্টেট ব্যাঙ্ক, উৎসবের এই উপহারে থাকছে একটাই শর্ত​

সরকারি সূত্রের খবর, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে চললেও এখনও পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ৬৫% ঋণ মঞ্জুর হয়েছে। ছোট শিল্পের অন্যতম সংগঠন ফিসমে-র সেক্রেটারি জেনারেল অনিল ভরদ্বাজের মতে, প্রকল্প আকর্ষণীয় হলে প্রায় সকলেই তার সুযোগ নিতে ঝাঁপায়। কিন্তু এটিও ঋণ প্রকল্প। করোনার সময়ে ফের বাড়তি ধারের বোঝা চাপার ঝুঁকির কারণে অনেকেই হয়তো আগ্রহী হননি। ঋণের আতিরিক্ত বোঝার সংশয়ের কথা বলছেন অপর সংগঠন ফসমির প্রেসিডেন্ট বিশ্বনাথ ভট্টাচার্যও। তবে তাঁর দাবি, অনেক সংস্থাই এই প্রকল্পের সুবিধা নিয়েছে। বন্ধকহীন ঋণও মিলেছে।

এমএসএমই-র জন্য

•করোনার জেরে সঙ্কটে পড়া ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি সংস্থার জন্য বন্ধকহীন ঋণের সুবিধা।

•‘এমার্জেন্সি ক্রেডিট লাইন গ্যারান্টি স্কিম’ নামে ওই প্রকল্পে অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৩ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ বণ্টনের লক্ষ্যমাত্রা।

•সংস্থাগুলির গত ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নেওয়া মোট ঋণের বকেয়ার ২০% পর্যন্ত ধার মিলবে।

শিল্পের বক্তব্য

•অনেকে এই ঋণ নিলেও ক্ষুদ্র ও ছোট সংস্থার বেশিরভাগেরই কাজে আসেনি এই প্রকল্প।

•যে সংস্থার আগে কোনও ঋণ নেই, করোনায় তাদের আর্থিক সাহায্যের দরকার থাকলেও তারা এই সুবিধা নিতে পারেনি।

•নতুন করে ঋণে জড়িয়ে আর্থিক বোঝা বৃদ্ধি নিয়ে সংশয় ছিল।

•অনেক ক্ষেত্রেই আবেদনকারীর কাছে ফের বন্ধক চাওয়া হয়েছে।

•সুদের হারও অন্য বাণিজ্যিক ঋণের সুদের মতোই থাকায় আদতে স্বস্তি মেলেনি।

ছোট সংস্থার দাবি

•ঋণ নয়, বরং লকডাউনে কর্মীদের বেতন দিয়ে কেন্দ্র সরাসরি সাহায্য করলে স্বস্তি পেত সংস্থাগুলি।

•বাংলাদেশের মতো এই শিল্পের জন্য সুদ কমালে ভাল হত।

•রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি, সব বড় সংস্থার কাছে ছোট শিল্পের পাওনা দ্রুত মেটাতে উদ্যোগী হওয়া জরুরি ছিল।

অনিলের যদিও বক্তব্য, শর্তসাপেক্ষে আগের বকেয়া ঋণের উপর ২০% ধার কতটা আকর্ষণীয় তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল শিল্প মহলের একাংশে। আবার অনেক ব্যাঙ্কেই শুরুতে এত নথিপত্র ও ব্যক্তিগত গ্যারান্টির শর্তও চাওয়া হয় যে, অনেকে শেষে পিছিয়ে যান। কিছু ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের তরফে সমস্যার কথা মানছেন বিশ্বনাথবাবুও।

ঋণ না-থাকলে প্রকল্পে ধার মিলবে না, এই শর্তে বহু ক্ষুদ্র ও ছোট সংস্থার গোড়াতেই বাদ যাওয়ার কথা বলছেন ফ্যাকসির প্রেসিডেন্ট হিতাংশু গুহ। তাঁর ও অনিলের দাবি, ঋণ নয় বরং এই শিল্পের দুর্ভোগ কমাতে সরাসরি আর্থিক সাহায্যের অনেক বেশি দরকার ছিল। যেমন অনিলের মতে, লকডাউনে ব্যবসা বন্ধ থাকায় কর্মীদের বেতন দিতে সমস্যায় পড়েছিল বহু ছোট সংস্থা। সেই খাতে ত্রাণ চেয়েছিল এই শিল্প, তা দিলে ভাল হত। তার উপরে এই ঋণ প্রকল্পে সুদের হার কার্যত অন্য ঋণের মতোই না-রেখে কিছুটা কমালে প্রকল্পটি আকর্ষণীয় হত বলেও মত হিতাংশুবাবুর। তাঁর দাবি, বাংলাদেশে ছোট শিল্পের জন্য সুদের হার কিছু ক্ষেত্রে কম। সব মিলিয়ে তাই মেয়াদ বাড়ানোর আর দরকার নেই, বলছেন শিল্প মহলেরই অনেকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement