এনএসইতে সপ্তম। বিএসইতে চার নম্বরে। দেশের দুই প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জে নথিভুক্ত ছোট ও মাঝারি সংস্থার সংখ্যার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের স্থান একেবারে ফেলনা নয়। কিন্তু প্রথম সারিতে থাকা রাজ্যগুলির তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে রয়েছে অনেকটাই। যেমন, বিএসইতে গুজরাতের ৮০টি ছোট ও মাঝারি সংস্থা থাকলেও এ রাজ্যের সংস্থার সংখ্যা ১৮। আবার এনএসইতে গুজরাতের ৫৩টি সংস্থা নথিভুক্ত হলেও এ রাজ্যের মাত্র ৬টি সংস্থা রয়েছে সেখানে।
ঘটনা হল, পুঁজির জন্য ছোট সংস্থাগুলিকে মূলত ব্যাঙ্ক ঋণের উপরেই নির্ভর করতে হয়। কিন্তু সংস্থাগুলির একাংশের অভিযোগ, অনেক সময়েই ব্যাঙ্ক তাদের আর্জিতে কান দেয় না। উপরন্তু নোটবন্দি ও ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদ বৃদ্ধির জেরে তাদের সমস্যা আরও বেড়েছে। সম্প্রতি এই ঋণের সমস্যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছোট ও মাঝারি চালু সংস্থাগুলির ব্যবসা ছড়ানোর জন্য পুঁজির বিকল্প পথের সন্ধান দিতে ২০১২ সালেই প্রথমে বিএসই এবং পরে এনএসইতে আলাদা এক্সচেঞ্জ চালু হয়। এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে বিএসএই ও এনএসইর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে রাজ্য।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বাজারে পা রাখলে সংস্থার হিসেব নিকেশে স্বচ্ছতা বাড়ে। শক্তিশালী হয় কাঠামো। বিএসই-এসএমইর সিইও অজয় কুমার ঠাকুর বলেন, ‘‘শেয়ার ছাড়লে সংস্থার সম্পদের সঠিক মূল্যায়ন হয়। পরিচিতি বাড়ে। ব্র্যান্ডের উন্নতি হয়।’’ এ রাজ্যে এনএসইর প্রধান তোজো বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবার বক্তব্য, নথিভুক্ত সংস্থাগুলির ব্যাঙ্ক থেকে বাড়তি ঋণ পেতেও সুবিধা হয়। তিনি বলেন, ‘‘শেয়ার ছাড়লে সংস্থার ঋণ ও ইকুইটির অনুপাত ভাল হয়। যা সহজে ঋণ পাওয়ার অন্যতম শর্ত।’’ এই শিল্পের অন্যতম সংগঠন ফসমির প্রেসিডেন্ট বিশ্বনাথ ভট্টাচার্যের মতে, ঋণ নিলে তা শোধ দেওয়ার জন্য খরচ বাড়ে। তাই বাজারে নথিভুক্তির মতো পথ বিকল্প হিসেবে যথেষ্ট ভাল।
তা হলে সাড়া কম কেন? বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নিয়ে ছোট ও মাঝারি শিল্পের একাংশের মধ্যে স্পষ্ট ধারণার অভাব রয়েছে। অনেক শিল্প কর্তাই ভাবেন, শেয়ার ছাড়লে যদি সংস্থার উপর তাঁদের রাশ আলগা হয়ে যায়! যদিও শেয়ার বাজারের কর্তাদের দাবি, এই আশঙ্কা একেবারেই অমূলক। কারণ, কে কতটা শেয়ার কিনতে পারবেন, শর্তে তার রক্ষাকবচ রয়েছে। বিশ্বনাথবাবুর কথায়, ‘‘স্টক এক্সচেঞ্জে নথিভুক্ত হলে আদতে সংস্থা পরিচালনায় শৃঙ্খলা বাড়ে। ছোট থেকে বড় হওয়ার পথও কিছুটা সহজ হয়।’’