টানা দু’দিন বাড়ার পর সোমবার কিছুটা গুম মেরে রইল বাজার। এ দিন সেনসেক্স অবশ্য নামেনি। তবে বৃহস্পতি, শুক্রবার যেখানে ৩৫২ পয়েন্ট উঠেছিল, সেখানে এ দিন পুরো সময় লেনদেনের পর উত্থান মাত্র ১৭। বাজার বন্ধের সময় সূচক দাঁড়ায় ২৬,১৪৫.৬৭ অঙ্কে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সূচকের এ রকম গুটিয়ে থাকার মূল কারণ ছিল আর্থিক বৃদ্ধির হার নিয়ে উদ্বেগ। যা প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল এ দিন বিকেলেই। ফলে শেয়ার বাজারের লগ্নিকারীরা সারাটা দিন কাটিয়েছেন দোলাচলে এবং দূরে থেকেছেন শেয়ার কেনা থেকে।
পাশাপাশি মঙ্গলবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি পর্যালোচনায় বসার কথা। শেয়ার বাজার মহলের দাবি, সেখানে সুদ নিয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়, ফের পুঁজি ঢালার আগে লগ্নিকারীরা এটাও দেখে নিতে চাইছেন। আর এ সবের জেরেই এ দিন মাত্র ১৭ পয়েন্ট উঠেই ক্ষান্ত হয় সূচক।
দু’দিন টানা পতনের পর ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম অবশ্য ৯ পয়সা বেড়েছে। ফলে এক ডলারের দাম হয়েছে ৬৬.৬৭ টাকায়।
এ দিন বাজার বন্ধের পরই প্রকাশিত হয় আর্থিক বৃদ্ধির সরকারি পরিসংখ্যান। জানা যায়, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর, এই তিন মাসে ওই হার ছুঁয়েছে ৭.৪%। যার হাত ধরে চিনকে পেছনে ফেলে বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলা অর্থনীতির শিরোপা পেয়েছে ভারত। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, আগামী দিনে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বাজারে।
আজ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অবশ্য সুদের হারে কোনও বদল আনবে না বলেই ধারণা বেশির ভাগ বাজার বিশেষজ্ঞদের। চলতি আর্থিক বছরে এখনও পর্যন্ত মোট চার দফায় ১২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। অনেকেই মনে করছেন, হালে মূল্যবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়ায় তাদের এ বারের নিশানা হবে আগামী দিনে তার উপর রাশ ফের একটু শক্ত করা। কী করে সেটা করা হবে, লগ্নিকারীদের নজর এখন সে দিকেই।
এই পরিস্থিতিতে সার্বিক ভাবে চলতি সপ্তাহে শেয়ার বাজার নিয়ে বেশ কিছুটা আশাবাদী দেখাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের। কারণ, পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) নিয়ে রফায় পৌঁছনোর আগ্রহ দেখিয়েছে সরকার ও বিরোধী, দুই পক্ষই। এর থেকে সংসদের চলতি অধিবেশনেই জিএসটি বিল পাশের ইঙ্গিত পাচ্ছেন তাঁরা।
এখন মাথাব্যথা শুধু আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভের সুদ বাড়ানোর আশঙ্কা। ডিসেম্বরেই তা বাড়তে পারে বলে জল্পনা ছড়িয়েছে। এতে কিছুটা চিন্তিত বাজার মহল। অনেকের অবশ্য দাবি, আমেরিকা সুদের হার বাড়ালেও তার প্রভাব ভারতের শেয়ার বাজারে তেমন জোরদার পড়বে না। কারণ, তাঁদের মতে, বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘকাল ধরেই আলোচনা চলছে। তাই এটি এখন বাজারের গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া, বিশেষজ্ঞদের একাংশের অভিমত, ভারতের শেয়ার বাজার চাঙ্গা হবে দেশের আর্থিক উন্নয়নে ভর করে। মার্কিন মুলুকে সুদ বৃদ্ধি কোনও ভাবেই সেই পথে কাঁটা হতে পারবে না।