শক্তিকান্ত দাস। মঙ্গলবার মুম্বইয়ে। ছবি: পিটিআই।
রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে নির্দেশিকা আসতেই পারে। কিন্তু তাদের সেই পদক্ষেপ করতে হবে, যা দেশের বৃহত্তর অর্থনীতির স্বার্থ রক্ষার জন্য জরুরি। এ ব্যাপারে আরবিআই গভর্নরকে তাঁর বিচার-বুদ্ধি প্রয়োগ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে— মঙ্গলবার শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর হিসাবে চাকরি জীবনের শেষ দিনে এই বার্তাই দিয়ে গেলেন শক্তিকান্ত দাস। ওই পদে ছ’বছর কাটানোর পরে আজ থেকে অবসর নিলেন তিনি। নতুন গভর্নর হিসেবে রাজস্ব সচিব সঞ্জয় মলহোত্রকে নিয়োগ করেছে কেন্দ্র।
বিদায়ের আগে এ দিন আরবিআই গভর্নর হিসেবে শেষ বার সাংবাদিক বৈঠক করেন শক্তিকান্ত। সেখানেই উঠে আসে সরকারের সঙ্গে তাঁর জমানায় আরবিআইয়ের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন। তাঁর আগে ওই পদে দায়িত্ব সামলানো রঘুরাম রাজন কিংবা উর্জিত পটেলের সঙ্গে সরকারের নানা বিষয়ে মতান্তরই যার উৎস। তার উপর হালে আর্থিক বৃদ্ধির হারে গতি আনার জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের একাংশ সুদ কমানোর বার্তা দিলেও, শক্তিকান্ত এ মাসে তাঁর শেষ ঋণনীতিতে সেই পথে হাঁটেননি। এ দিন অবশ্য শক্তিকান্ত দাবি করেছেন, তাঁর নেতৃত্বাধীন আরবিআইয়ের সঙ্গে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের বোঝাপড়া এবং সমন্বয় ছিল সেরা। তবে একই সঙ্গে তাঁর বার্তা, অলিখিত কিছু নির্দেশিকা থাকে বটে। আরবিআই গভর্নরের কাজ অর্থনীতির স্বার্থ রক্ষা আর সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই কোনও নির্দেশিকা কার্যকর করার ব্যাপারে পদক্ষেপ করা। যাতে বর্তমানের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রয়োজনও পূরণ করা যায়। সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, তিনি সরাসরি না বললেও, সরকারের তরফে কিছু নির্দেশ থাকার ইঙ্গিতই দিয়েছেন তিনি।
নতুন গভর্নর হিসেবে তাঁর নীতি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে এ দিনই মলহোত্র বলেন, “সব ধরনের মতামত শুনব। কিন্তু যা দেশের অর্থনীতির মঙ্গল করবে, পদক্ষেপ করব সেই লক্ষ্যেই।’’ অর্থ মন্ত্রকের বাইরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তাঁর মন্তব্য, “নতুন দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রথমে জরুরি মাঠ চেনা এবং বিভিন্ন ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি অনুধাবন করা। তবে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এমন সিদ্ধান্তই নিতে হবে।’’ যদিও তাঁর বিশ্বাস, পণ্যের দাম একা আরবিআই ঠিক করে দিতে পারবে না। ওই কাজে কেন্দ্রের সাহায্য জরুরি।
উল্লেখ্য, প্রায় সাড়ে চার বছর আগে শেষ বার দেশে সুদ কমেছিল। তার পরে খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে ২০২২-এর মে থেকে গত বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লাগাতার সুদ বাড়ায় আরবিআই। তার পর থেকে ওই হার স্থির। লগ্নি ও চাহিদা বাড়াতে শিল্প এবং সরকারের তরফে দ্রুত সুদ কমানোর দাবি জোরালো হচ্ছে বহু দিন ধরে। গত জুলাই-সেপ্টেম্বরে আর্থিক বৃদ্ধি ৫.৪ শতাংশে নামার পরে সেই চাপ বাড়ে। এ দিন অবশ্য শক্তিকান্তের বার্তা, আর্থিক বৃদ্ধি শুধু সুদের উপরে নির্ভর করে না। চ্যালেঞ্জ, আর্থিক বৃদ্ধি এবং মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে ভারসাম্য আনা।