—প্রতীকী চিত্র।
পর পর দু’সপ্তাহে বড় উত্থানের পরে ছোট আকারের সংশোধন দেখা দিয়েছিল গত সপ্তাহে। ১৫ ডিসেম্বর বাজার উঠেছিল সর্বকালীন উচ্চতায়। সেনসেক্স পৌঁছেছিল ৭১,৪৮৪ অঙ্কে। নিফ্টি ছোঁয় ২১,৪৫৭। সূচকগুলি অতি অল্প সময় এতটা উঁচুতে ওঠায় সংশোধনের সম্ভাবনা ছিলই। গত সোমবার সেনসেক্স নামে ১৬৯। বুধবার গোত্তা খায় আরও ৯৩১ পয়েন্ট। কিন্তু তার পরে আরও তলিয়ে যায়নি শেয়ার সূচক। বরং পরের দু’দিনে ৬০১ উপরে লাফ দেয়। ফের ৭১ হাজারের ঘরে ঢুকে সপ্তাহ শেষ করে ৭১,১০৭ অঙ্কে। অর্থাৎ সর্বোচ্চ শিখরের থেকে তা মাত্র ৩৭৭ পয়েন্ট দূরে।
আমরা এখন ২০২৩-র শেষ সপ্তাহে। বড়দিন এবং নতুন বছর উপলক্ষে এই সময়ে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ছুটিতে যায়। উৎসবের আবহে বিভোর এ দেশও। ফলে বাজার কিছুটা নিষ্প্রভ থাকে। পতনের বড়সড় কারণ না ঘটলে এই সুযোগে দুই সূচকই ফের নজির গড়তে পারে বলে আশা। কারণ, লগ্নির জন্য বাজারে টাকার অভাব নেই। অর্থনীতির দিক থেকে তেমন কোনও খারাপ খবর আসেনি। বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুডের ব্যারেল ৮০ ডলারের নীচেই রয়েছে। যদিও করোনা নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে। পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিও ফের মাথা তুলেছে গত মাসে।
এই পরিস্থিতিতে বাজার এখন কয়েক দিনে ছোটখাটো ওঠাপড়ার মাধ্যমে নিজেকে গুছিয়ে নেবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর এই ক’দিন লগ্নিকারীদেরও নিজেদের বিনিয়োগের খুঁটিনাটিতে চোখ রাখার আদর্শ সময়। শেয়ারে, ফান্ডে কোথায় কত লগ্নি হল, কত রিটার্ন এল, আগামী বছর বিনিয়োগের পরিকল্পনা কী ভাবে সাজানো যেতে পারে— এই সব কিছু চুপচাপ বসে ছকে নেওয়া যায়।
বাজারে বিভিন্ন সংস্থার প্রথম শেয়ার ছেড়ে টাকা তোলার (আইপিও) ভরা জোয়ার চলছে এখন। ভাল ভাবে উতরেছে একগুচ্ছ আইপিও। কিছু সংস্থার শেয়ার (নতুন ইসু) নজিরও গড়েছে। নজর কাড়া সাফল্য পেয়েছে টাটা টেকনোলজিস এবং আইআরইডিএ-র মতো ইসু। বেশির ভাগ আইপিও-র ক্ষেত্রেই লগ্নিকারীরা নথিবদ্ধ হওয়ার দিন থেকে লাভের সন্ধান পেয়েছেন। তাতে উৎসাহিত হয়ে ভিড় বাড়ছে নতুন ইসুর বাজারে।
বছরের শেষ সপ্তাহে জানা যাবে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে জানুয়ারি-মার্চের সুদ। অনুমান, এই দফায় হয়তো সুদের হারে তেমন হেরফের হবে না। এ দিকে, ভারতের বিদেশি মুদ্রা ভান্ডার এখন স্বস্তিদায়ক জায়গায়। ১৫ ডিসেম্বর শেষ হওয়া সপ্তাহে ৯১১ কোটি ডলার বেড়ে তাতে জমা ৬১,৫৯৭ কোটি ডলার। সর্বাধিক জমা ছিল ২০২১-র অক্টোবরে, ৬৪,৫০০ কোটি ডলারে।
এ বার অনেকটা আগেই রিটার্ন জমার ফর্ম প্রকাশ করেছে আয়কর দফতর। চলতি অর্থবর্ষের (২০২৩-২৪ আর্থিক বছর এবং ২০২৪-২৫ অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার বা হিসাববর্ষের) জন্য গত শুক্রবার তারা এনেছে আইটিআর-১ (সহজ) এবং আইটিআর-৪ (সুগম)। ব্যক্তিগত এবং সংস্থাগত আয়করদাতার বার্ষিক মোট আয় ৫০ লক্ষ টাকার মধ্যে থাকলে, এই ফর্ম দু’টি ব্যবহার করতে হবে। ৩১ জুলাই রিটার্ন জমার শেষ দিন।
এই অর্থবর্ষ থেকে নতুন কর কাঠামোই প্রধান কর কাঠামো। কেই চাইলে পুরনোতে ফিরতে পারেন। তবে বছরে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের ক্ষেত্রে করের স্তর বাড়ায় এবং করের হার কমায় বহু মানুষ নতুনকেই বেছে নেবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এতে বার্ষিক ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত। ৭.২৭ লক্ষ টাকার বেশি হলে কর ধার্য হবে ৩ লক্ষ থেকে। তবে এই ব্যবস্থায় বেশির ভাগ কর ছাড় নেই। স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন বাবদ ছাড় আছে দু’ক্ষেত্রেই। করদাতাদের এখনই ঠিক করতে হবে কোনটিতে থাকবেন।
(মতামত ব্যক্তিগত)