প্রতীকী ছবি
ওমিক্রন যতই দাবানলের মতো ছড়াক, তার মৃদু প্রভাব সাধারণ মানুষের পাশাপাশি কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে শেয়ার বাজারকেও। সেনসেক্স তাই নতুন বছরের প্রথম ১০টি লেনদেনের ৮টিতেই উঠেছে। প্রায় ২৯৬৯ পয়েন্ট লাফ দিয়ে পৌঁছেছে ৬১,২২৩ অঙ্কে। রেকর্ড উচ্চতা ৫৪৪ পয়েন্ট দূরে। তবে বর্তমান পরিস্থিতির বিচারে বাজারের এতখানি উচ্চতা আশা করেননি অনেকেই। কারণ, মাথা তুলছে মূল্যবৃদ্ধি, সুদ বৃদ্ধির আশঙ্কা বাড়ছে, আমেরিকার মতো দেশ সুদ বাড়ালে ও কোভিডের ত্রাণ গোটালে ভারতের মতো উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে নগদের জোগান কমার সম্ভাবনাও তীব্র হচ্ছে। অথচ সব কিছুকে উপেক্ষা করে শেয়ার সূচক চড়ছে। এটাই অস্বাভাবিক। তাই চাঙ্গা বাজারেও উদ্বেগের ছায়া।
সূচক হয়তো অক্টোবর-ডিসেম্বরে সংস্থার হিসাবের খাতা মজবুত হওয়ার আশায় বুক বাঁধছে। তবে সেখানেও দুশ্চিন্তা আছে। কাঁচামালের দাম বাড়ায় যে ভাবে উৎপাদন খরচ বেড়েছে, তাতে বহু সংস্থার ফল আশানুরূপ হওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
ডিসেম্বরে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার বেড়ে হয়েছে ৫.৫৯%, যা আগের মাসে ছিল ৪.৯১%। এটা রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের নির্ধারিত মূল্যবৃদ্ধির সহনসীমার (৬%) কাছাকাছি। পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি অবশ্য নভেম্বরের ১৪.২৩% থেকে কমে ১৩.৫৬% হয়েছে। তবে সেখানেও মাথাব্যথা খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার প্রায় দু’বছরে সর্বোচ্চ (৯.৫৬%) হওয়া। শীতকালে যা কাম্য ছিল না। নভেম্বরে শিল্প বৃদ্ধিও মাত্র ১.৪%। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে থাকলে যা এত কম হওয়ার কথা নয়। চিন্তা জাগিয়ে গত বছর ৭% হারে জিনিসের দাম বেড়েছে আমেরিকাতেও। যা ১৯৮২-র পরে সর্বাধিক। ডিসেম্বরে ভারতে রফতানি ৩৮.৯১% বাড়লেও, আমদানি বেড়েছে ৩৮.৫৫%। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি তেমন আশা জাগায় না। অথচ বাজারের হেলদোল নেই।
বন্ড ইল্ডের বৃদ্ধিও চিন্তা বাড়াচ্ছে। ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ডে ইল্ড ছুঁয়েছে ৬.৫৮%। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক শুক্রবার ৬.৫৪% সুদযুক্ত ১৩,০০০ কোটি টাকার বন্ড নিলামের জন্য বাজারে ছাড়ে। বাজারের তুলনায় ইল্ড কিছুটা কম হওয়ায় ৭৫৫৮ কোটি টাকার বন্ড গৃহীত হয়। সব মিলিয়ে সুদ বৃদ্ধির পরিবেশ তৈরি। স্টেট ব্যাঙ্ক এবং এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক এরই মধ্যে কিছু মেয়াদি জমায় ১০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত সুদ বাড়িয়েছে। আরবিআই সুদ নিয়ে কী করে, তা-ই এখন দেখার। লগ্নিকারীদের এখন নজরে এখন—
কেন্দ্রীয় বাজেট।
অক্টোবর-ডিসেম্বর সংস্থাগুলির লাভ-ক্ষতির হিসাব।
অশোধিত তেলের দাম।
আমেরিকার সুদ বৃদ্ধি এবং ত্রাণ কমানোর উদ্যোগ।
পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনী হাওয়া।
অর্থনীতিতে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা।
বিদেশি লগ্নির পরিমাণ।
এলআইসি-র আইপিও-সহ সরকারের বিলগ্নিকরণ প্রয়াস।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক ফলাফলে এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের নিট
মুনাফা ১৮% বেড়ে হয়েছে ১০,৩৪২ কোটি টাকায়, টিসিএসের ১২.৩% বেড়ে ৯৭৬৯ কোটি ও ইনফোসিসের ১১.৮% বেড়ে ৫৮০৯ কোটি টাকায়।
(মতামত ব্যক্তিগত)