প্রতীকী ছবি।
শিখর থেকে ১০,০০০ পয়েন্ট নীচে!
শেয়ার বাজার যে ভাবে নেমে চলেছে, তাতে অনেকেই আতঙ্কিত। শেষ দফায় সূচক নেমেছে টানা ছ’দিন। সেনসেক্স খুইয়েছে ৩৯৬০ পয়েন্ট। গত শুক্রবার লেনদেনের শেষে সূচকটি থিতু হয়েছিল ৫১,৩৬০ অঙ্কে। সর্বোচ্চ (৬১,৭৬৬) অবস্থান থেকে ১০,৪০৬ পয়েন্ট (১৬.৮৫%) নীচে। বাজার নামার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে বন্ডের ইল্ড। ফলে শেয়ার নির্ভর (একুইটি), ঋণপত্র নির্ভর (ডেট) এবং ব্যালান্সড মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের নেট অ্যাসেট ভ্যালু (ন্যাভ) ভাল রকম কমেছে। স্বস্তিতে নেই কেউ।
এই পতনে অবশ্য পোড় খাওয়া বাজার বিশেষজ্ঞেরা বিশেষ চিন্তিত নন। তাঁদের মতে, কমা জলে বড় মাছ ধরার এটাই সুযোগ। গত ছ’দিনে সেনসেক্স যত পয়েন্ট হারিয়েছে, ২০২০ সালের মার্চে দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণার পর মাত্র এক দিনে প্রায় তেমনই খুইয়েছিল (৩৯৩৪)। আর অতিমারির ধাক্কায় বিপর্যস্ত বাজারেও সূচকটির ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় লাগেনি। অর্থাৎ, একটু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।
এ বারে এতটা পতনের অন্যতম কারণ অবশ্য ভারতে রেপো রেট (যে সুদে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয়) দু’দফায় ৯০ বেসিস পয়েন্ট এবং আমেরিকায় ফেড রেট একলপ্তে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি। অতীতের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যাবে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ফেড রেট বাড়ানো হয়েছিল ২০০ বেসিস পয়েন্ট। তা সত্ত্বেও সেই সময়ে নিফ্টি বেড়েছিল প্রায় ৪০% এবং ডাও জোন্স ৩১%। অর্থাৎ, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবে অবশ্যই সাবধানে থাকতে হবে। পরিস্থিতি যা তাতে আগামী দিনে সুদ হয়তো আরও বাড়বে। সে কারণে বাজার তলানিতে ঠেকেছে, এমন কথা এখনই বলা যাচ্ছে না। পতনের বিরুদ্ধে তেমন প্রতিরোধ গত কয়েক দিনে দেখা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে ভাল ডিভিডেন্ড ইল্ড আছে এমন শেয়ার একটু একটু করে ঝুলিতে পোরা যায়। যত দিন না শেয়ারের দাম বাড়ে, অন্তত পক্ষে ডিভিডেন্ড বাবদ কিছু আয় আসবে। অনেক শেয়ার তো এরই মধ্যে বেশ লোভনীয় জায়গায়।
সম্প্রতি খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার সামান্য মাথা নামিয়েছে। এপ্রিলের ৭.৭৯% থেকে মে মাসে তা কমে হয়েছে ৭.০৪%। কিন্তু একই দিনে ফেড রেট ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পাওয়ায় মূল্যবৃদ্ধির খবর বাজারকে তেমন শক্তি জোগায়নি। পাইকারি মূল্যবৃদ্ধিও ১৫.৮৮ শতাংশে পৌঁছে হয়েছে ৩০ বছরের সর্বোচ্চ। পড়েছে টাকা। ১ ডলারের দাম ৭৮.০৯ টাকা হয়েছে। বাড়ছে আমদানি খরচ। বন্ড ইল্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারের বাজার থেকে ঋণের উপর সুদের খরচ বাড়বে।
এত সমস্যার মধ্যে ভাল খবরও আছে। ১৫ জুন ছিল আগাম করের প্রথম কিস্তি জমা দেওয়ার শেষ দিন। এ বার নিট প্রত্যক্ষ কর জমা পড়েছে ৩.৩৯ লক্ষ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৫% বেশি। এই তথ্য ইঙ্গিত দেয়, বছরের প্রথম তিন মাসে দেশের অর্থনীতির অবস্থা তেমন খারাপ নয়। বাজারে যে দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে তার জন্য বিশ্ব পরিস্থিতি অনেকটা দায়ী। এখন যার জন্য দেশ অপেক্ষা করে রয়েছে, তা হল ভাল বর্ষা এবং তার প্রভাবে খাদ্যপণ্যের দাম কমে আসা।
(মতামত ব্যক্তিগত)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।