ফাইল চিত্র।
অস্থিরতা যেন রোজ একটু করে বাড়ছে। আর তার জেরেই শুক্রবার ফের ৫৪ হাজারের ঘরে নামল সেনসেক্স। দিনভর পড়ল ১১১৫.৪৮ পয়েন্ট। শেষে থামল ৫৪,৮৩৫.৫৮ অঙ্কে। পতন ৮৬৬.৬৫। পুরো সপ্তাহ ধরলে ২২২৫.২৯ পয়েন্ট বা ৩.৮৯%। শুধু শুক্রবারই বাজার থেকে মুছে গিয়েছে লগ্নিকারীদের ৪.৪৭ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি শেয়ার সম্পদ। নিফ্টি ২৭১.৪০ কমে দাঁড়িয়েছে ১৬,৪১১.২৫-এ। ডলারের সাপেক্ষে বিপুল পড়েছে টাকার দাম। ৫৫ পয়সা বেড়ে এক ডলার হয়েছে ৭৬.৯০ টাকা।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, অশোধিত তেলের দামের (ব্যারেলে ১১২ ডলার) জন্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে চিন্তা বাড়ছে। শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্ব অর্থনীতির বিপদ। চড়া দামের জ্বালানি ব্রিটেনকে মন্দার মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তড়িঘড়ি সুদ বাড়াতে হচ্ছে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলিকে। এতে আর্থিক বৃদ্ধির ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা, কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির কামড় থেকে বাঁচতে আর কোনও পথ নেই। ভারতে টাকার পড়তি দামও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
জিয়োজিৎ ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস-এর গবেষণা বিভাগের প্রধান বিনোদ নায়ারের মতে, আমেরিকার শেয়ার বাজারে ধস নেমেছিল। সেটাই বিশ্ব বাজারকে আঘাত করেছে। ব্রিটেনে মন্দার ঝুঁকি নিয়ে ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ডের হুঁশিয়ারি লগ্নিকারীদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। দেকো সিকিউরিটিজ়ের ডিরেক্টর আশিস নন্দী বলেন, “সুদ বৃদ্ধির পাশাপাশি বাজার থেকে নগদ কমাতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের পদক্ষেপে শিল্পের মূলধন সংগ্রহের খরচ বাড়বে। লগ্নিকারীদের চিন্তা, এতে সংস্থাগুলির মুনাফা-আয় কমতে পারে। তবে এই প্রভাব সাময়িক। পরিকাঠামো উন্নয়ন-সহ কেন্দ্রের ঘোষিত পরিকল্পনাগুলি বাস্তবায়িত হতে শুরু করলে সূচক চাঙ্গা হবে ফের।’’
ব্রোকিং সংস্থা ডি বি অ্যান্ড কোং-এর কর্ণধার দেবু বিশ্বাস অবশ্য ভারতে সুদ বৃদ্ধি নিয়ে তেমন চিন্তিত নন। তাঁর মতে, ‘‘এর ধাক্কা স্বল্পমেয়াদি। ভারতের শেয়ার বাজারে সমস্যার ৭৫ ভাগের জন্য দায়ী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আমেরিকায় মূল্যবৃদ্ধির জেরে সুদ বৃদ্ধি এবং কোভিডের কারণে চিনের বহু অঞ্চলে লকডাউন ঘোষণা। এ সবের ফলে অশোধিত তেল-সহ বিভিন্ন পণ্যের জোগানে ঘাটতি বড় সমস্যা সৃষ্টি করেছে। এগুলির অন্তত খানিকটা না মিটলে বাজারের হাল ফেরা কঠিন। তবে ভারত তুলনায় নিরাপদ।’’ সূচক আরও পড়বে, মনে করেন ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন সভাপতি কমল পারেখ। তিনি বলেন, “এক বছরে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ কোটি টাকার শেয়ার বেচেছে ভারতে। এখনও বিক্রি বহাল। সেনসেক্স আরও ২০০০ পয়েন্ট পড়তে পারে। তার পরে শুরু হতে পারে তার নতুন দৌড়।’’