— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
নজিরবিহীন উচ্চতায় ওঠার পরেই ফের হোঁচট খেল বাজার। ৭৪,০০০ ছাপিয়ে যাওয়া সেনসেক্স গত সপ্তাহে হারাল মোট ১৪৭৭ পয়েন্ট। তবে এই পতন দেখে বোঝা যাবে না গত সপ্তাহে সামগ্রিক ভাবে বাজার কতটা দুর্বল আর অস্থির ছিল। বড়গুলির তুলনায় অনেক বেশি নামতে দেখা গিয়েছে মোট শেয়ারমূল্যের নিরিখে মাঝারি (মিড ক্যাপ) এবং ছোট মাপের (স্মল ক্যাপ) সংস্থার অসংখ্য শেয়ারকে। বেশ কিছু মাঝারি এবং ছোট শেয়ারের দাম অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রক সেবি লগ্নিকারীদের সতর্ক করেছিল। মনে করা হচ্ছে, ওই বার্তাই মূলত গত সপ্তাহে বাজার নামার কারণ। কার্যত ধস নামে মিড ক্যাপ এবং স্মল ক্যাপ শেয়ারে। পতনের আবহে শামিল হয় সেনসেক্স, নিফ্টিও। শুক্রবার সেনসেক্স নামে ৭২,৬৪৩ অঙ্কে। নেমেছে বেশির ভাগ মিড ক্যাপ এবং স্মল ক্যাপ ভিত্তিক ফান্ডের ন্যাভও।
শেয়ার বাজারের এই অস্থিরতার মধ্যেই শনিবার ঘোষণা হল ভোটের দিনক্ষণ। ফলে আগামী দেড় মাসের বেশি সময় ধরে সূচকের গতিপথে থাকবে নানা ধরনের অনিশ্চয়তা। পাশাপাশি এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে বেরোবে চতুর্থ (জানুয়ারি-মার্চ) ত্রৈমাসিক এবং গোটা অর্থবর্ষে সংস্থাগুলির আর্থিক ফলাফল। তবে বর্ষা সম্পর্কে যা আগাম আভাস মিলছে, তাতে ভারত এ বার স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত পেতে চলেছে বলেও আশা।
কাজেই সংস্থাগুলির আর্থিক ফল যদি মোটের উপর ভাল হয় এবং ভোটের ফলাফল যদি লগ্নিকারীদের মনে ধরে, তা হলে ৪ জুনের পরে বাজারে অস্থিরতা কাটতে পারে। এমনিতে সূচক এখনও যথেষ্ট চড়া। অস্থিরতা কাটলে আরও উপরে ওঠার সুযোগ খুলবে। লোকসভা নির্বাচনে জিতে বিজেপি ফের ক্ষমতায় আসবে ধরে নিয়েই বাজার ৭৪,০০০ পেরিয়েছিল। এর পর নির্বাচনের ফলাফল কী হয় সেটাই দেখার।
তবে গত মাসে মাত্র এক শতাংশ বিন্দু নেমেছে ভারতের খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার। ৫.১% থেকে নেমে হয়েছে ৫.০৯%। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি আশঙ্কাজনক, ৮.৬৬%। জানুয়ারিতে ছিল ৮.৩%। এই পরিস্থিতিতে দেশে সুদ ছাঁটাই কঠিন। আমেরিকাতেও সামান্য চড়েছে পণ্যের দাম। ফলে ধরে নেওয়া যায় আগামী সপ্তাহে সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক সুদ কমানোর পথে হাঁটবে না। এ দেশেও রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সেই পদক্ষেপ করতে দেরি আছে।
এরই মধ্যে ভোটের মুখে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম কমানো হয়েছে লিটারে ২ টাকা করে। তবে এতে কারও বিশেষ সুবিধা হবে বলে মনে হয় না। আরও কিছুটা কমলে খুচরো মূল্যবৃদ্ধিতে সদর্থক প্রভাব পড়তে পারত। কারণ, তাতে পরিবহণের খরচ কমত। চলতি বছরে ভারত থেকে সব থেকে বেশি রফতানি হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। তা ১১.৯% বেড়ে পৌঁছেছে ৪১৪০ কোটি ডলারে। অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে উন্নতি দেখা দেওয়ার যুক্তিতে চলতি এবং পরের অর্থবর্ষে (২০২৪-২৫) দেশের জিডিপি বৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়াচ্ছে বিভিন্ন দেশি এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক সমীক্ষা সংস্থা। অর্থাৎ ছোট মেয়াদে বাজার চঞ্চল থাকলেও, দেশ শক্তিশালী সরকার পেলে তার মুখ উপরের দিকেই থাকবে বলে ধরে নেওয়া যায়। তবে শেয়ার দর অস্বাভাবিক উচ্চতায় পৌঁছলে সংশোধনও হতে থাকবে। যদিও এর মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে ৩.৮ শতাংশে থমকে থাকা গত জানুয়ারির শিল্পবৃদ্ধি নিয়ে। দোসর মূল্যবৃদ্ধি।
অর্থবর্ষ শেষ হতে আর ১৩ দিন বাকি। বছরের শেষ কাজের দিন ২৮ মার্চ বাজার কোথায় থাকে, তাতে চোখ থাকবে লগ্নিকারী সংস্থা এবং ব্যাঙ্কের। ওই দিনের দাম অনুযায়ী মূল্যায়ন (মার্ক টু মার্কেট) হবে খাতায় থাকা লগ্নিকৃত শেয়ার এবং বন্ডে। এর প্রভাব থাকবে লাভ-ক্ষতির হিসাবে।
(মতামত ব্যক্তিগত)