প্রতীকী ছবি।
টাকার দামের পতন অব্যাহত। বুধবার এই প্রথম ডলার পৌঁছল ৮৩ টাকায়। এক দিনেই দামি হয়েছে ৬০ পয়সা। ফলে রেকর্ড তলানিতে ভারতের মুদ্রা।
পরিসংখ্যান বলছে, এক মাসেরও কম সময়ে ৭৯ টাকার ঘর থেকে ৮৩ টাকায় উঠেছে ডলার। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছিলেন, টাকার পতন ঘটেনি। ডলার শক্তি বাড়াচ্ছে। তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়। কটাক্ষ করেন বিরোধীরাও। টাকাকে বাঁচাতে কেন্দ্র কী পদক্ষেপ করছে, এ দিন সেই প্রশ্ন তুলেছে এনসিপি। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর মন্তব্য, টাকা সবল হোক বা দুর্বল, দেশের অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরাতে অনেক কিছু করতে হবে। কারণ, নরেন্দ্র মোদীর জমানায় তাকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে।
এ দিন বিশেষজ্ঞদের দাবি, টাকার এমন পতন ভারতের অর্থনীতিতে চাপ বাড়াবে। বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম কমার সুবিধা নেওয়া যাবে না। অন্যান্য পণ্য এবং পণ্য তৈরির কাঁচামাল আমদানির খরচও বাড়বে। সব মিলিয়ে চড়া আমদানি খরচ মূল্যবৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে আনার ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে।
ভারতে শেয়ার বাজার বুধবার উঠেছে। তবে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির শেয়ার বিক্রি বহাল। বিশেষজ্ঞদের মতে, একে তো লগ্নির নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত ডলারের চাহিদা এখন বিশ্ব জুড়ে। তার উপরে আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের আরও সুদ বাড়ানোর ইঙ্গিত তাতে ইন্ধন জুগিয়েছে। সঙ্গে জুড়েছে দেশের বাজারে বিদেশি লগ্নিকারীদের শেয়ার বিক্রির হিড়িক। তারা তা ডলারে বদলে নিচ্ছে। সব মিলিয়ে আমেরিকার মুদ্রার চাহিদা বাড়ায় দাম ঊর্ধ্বমুখী।
আর্থিক বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দত্ত বলছেন, বিশ্বের আর্থিক ক্ষেত্রে ডামাডোল চললে ডলার শক্তিশালী হয়। বাড়তে থাকে তার দাম। কারণ, আমেরিকার মুদ্রাকে লগ্নির নিরাপদ ক্ষেত্র মনে করা হয়। বর্তমানে বিশ্ব জুড়ে মূল্যবৃদ্ধির সমস্যা ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে। আমেরিকা-সহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক তাতে লাগাম পরাতে আগ্রাসী ভাবে সুদের হার বাড়াতে নেমেছে। ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। আমেরিকা, ব্রিটেনের মতো দেশ মন্দার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা। তাই ডলারে লগ্নি এবং সে জন্য তার দাম বৃদ্ধি অস্বাভাবিক নয়। তবে তাঁর মতে, এতে আমদানির খরচ বাড়ায় অনেক জিনিসের দাম আরও বাড়বে ভারতে। সমস্যায় পড়বেন সাধারণ মানুষ। বাজারে চাহিদাও কমতে পারে, যা বিরূপ প্রভাব ফেলবে অর্থনীতিতে।
মূলধনী বাজার বিশেষজ্ঞ আশিস নন্দী বলেন, ‘‘রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক চ্যালেঞ্জের মুখে। ডলার বেচে টাকার দামের পতন রুখতে গেলে কমছে বিদেশি মুদ্রা ভান্ডার। যা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। অথচ টাকাকে পড়তে দিলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ তীব্র হচ্ছে বিরোধীদের। তাই তার দাম কোথায় ঠেকবেবলা মুশকিল।’’