ছবি সংগৃহীত
চারটি বাদে বাকি সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণের নীতি ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। কিন্তু আরএসএসের আর্থিক বিষয়ক সংগঠন স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ মনে করছে, সরকারি কর্তা ও অর্থনীতিবিদদের কথা শুনে এগোনোর বদলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণের ‘কুপ্রভাব’ নিয়ে চিন্তাভাবনা করা উচিত। আজ সংগঠনটির জাতীয় যুগ্ম-আহ্বায়ক অশ্বিনী মহাজন এক প্রবন্ধে লিখেছেন, সকলের কাছে উন্নয়নের সুফল পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি যে ভূমিকা পালন করে, ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের ফলে তার ক্ষতি হতে পারে। বেসরকারিকরণ করতে গিয়ে দেশীয় ব্যাঙ্ক বিদেশি সংস্থার হাতে চলে গেলে অর্থনীতিতে তার কুফল ভুগতে হবে।
ওয়াকিবহাল মহলের মত, ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণ সম্পর্কে সঙ্ঘ পরিবারের শাখাটির এই দৃষ্টিভঙ্গির ফলে মোদী সরকারের পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল। বেসরকারিকরণ নীতির বিরোধিতা করেছিল ব্যাঙ্কের কর্মী-অফিসারদের সংগঠনগুলিও। কংগ্রেস-সহ অধিকাংশ বিরোধী দলও এর বিরুদ্ধে।
সংসদের চলতি অধিবেশন শেষ হতে আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। জল্পনা চললেও এখনও পর্যন্ত ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণ বিল পেশের ব্যাপারে সরকারের তরফে বিশেষ উদ্যোগ দেখা যায়নি। এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, গত পাঁচ বছরে ব্যাঙ্কের প্রায় ৯ লক্ষ ৯১ হাজার কোটি টাকার অনাদায়ি ঋণ অনুৎপাদক সম্পদের (এনপিএ) খাতা থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে। মেহুল চোক্সীর গীতাঞ্জলি জেমস, ঋষি আগরওয়ালের এবিজি শিপইয়ার্ডের মতো সংস্থা ঋণখেলাপিদের তালিকায় উপরে রয়েছে। আগেই ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের সংগঠন এআইবিইএ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছিল, এর পরেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হবে? আজ বিজেপি সাংসদ বরুণ গান্ধীও একই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
মোদী কিছু দিন আগে রাজ্যগুলির ‘খয়রাতির’ সমালোচনা করে একে ‘রেউড়ি সংস্কৃতি’ বা মিষ্টি বিলি বলে কটাক্ষ করেছিলেন। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনায় আবার বিজেপি সাংসদরা সংসদে বলেছেন, পাঁচ কিলো রেশন বিলির জন্য প্রধানমন্ত্রীর ধন্যবাদ প্রাপ্য। আজ বরুণের কটাক্ষ, ‘‘যে সংসদ গরিবদের পাঁচ কিলো রেশনের জন্য ধন্যবাদ আশা করে, সেই সংসদই বলে, পাঁচ বছরে ভ্রষ্ট ধনপশুদের ১০ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ মাফ করা হয়েছে! বিনামূল্যে রেউড়ি নেওয়ার তালিকায় মেহুল চোক্সী, ঋষি আগরওয়ালের নাম রয়েছে। সরকারি অর্থে প্রথম অধিকার কার?’’
স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের নেতা মহাজনের মতে, ব্যাঙ্কের মালিকানা বদলে গেলেই যে দক্ষতা বাড়বে এমন নয়। রাষ্ট্রায়ত্তকরণের পরে ব্যাঙ্কের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছিল। সঞ্চয় বেড়েছিল। তার পরে আর সরকারি ব্যাঙ্ক ডোবেনি। কিন্তু অনেক বেসরকারি ব্যাঙ্ক ডুবেছে। সম্প্রতি লক্ষ্মীবিলাস ব্যাঙ্ক সিঙ্গাপুরের সংস্থার হাতে চলে গিয়েছে। এ ভাবে দেশের অর্থ বিদেশি নিয়ন্ত্রণে চলে গেলে অর্থনীতিতে তার কুফল ভুগতে হবে।