সীতারাম ইয়েচুরি, সাধারণ সম্পাদক, সিপিএম
জুলাই থেকে শুরু হয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ব্যবসাবর্ষ। চলে পরের বছরের জুন পর্যন্ত। সাম্প্রতিক সাপ্তাহিক রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, চলতি ব্যবসাবর্ষে সোনা কেনাবেচা বাড়িয়ে দিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। বস্তুত, দীর্ঘ দিন পরে তারা নিজেদের মজুত থেকে সোনা বিক্রি করেছে। শীর্ষ ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে তারা ৫১০ কোটি ডলারের সোনা কিনেছে। বিক্রি করেছে ১১৫ কোটি ডলার মূল্যের হলুদ ধাতু। এই নিয়ে কেন্দ্রের উদ্দেশে আক্রমণ শানিয়েছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তাঁর টুইট, ‘‘মোদী সরকার কি দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে? নিজেদের প্রচার এবং মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর জন্য সাধারণ মানুষের সম্পত্তি বিক্রি শুরু করেছে।’’
ওয়াকিবহাল মহল মনে করিয়ে দিচ্ছে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারে কত টাকাপয়সা থাকা উচিত, সে ব্যাপারে কেন্দ্রের সঙ্গে মতবিরোধে জড়িয়েছিল শীর্ষ ব্যাঙ্ক। এই দ্বন্দ্ব মেটাতে শীর্ষ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর বিমল জালানের নেতৃত্বাধীন কমিটিকে রিপোর্ট তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। সুপারিশে জালান কমিটি জানায়, ঝুঁকি সামলাতে হিসেবের খাতার বিভিন্ন খাতে তহবিলের ৫.৫% থেকে ৬.৫% সম্পদ রাখতে পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। উদ্বৃত্ত অংশ তারা কেন্দ্রকে দিতেই পারে। মাসকয়েক আগে সে সম্মতি দিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তার পর থেকেই সোনার কেনাবেচা বাড়িয়েছে তারা।
কেন এই ধরনের লেনদেন?
১১ অক্টোবরের তথ্য অনুযায়ী, শীর্ষ ব্যাঙ্কের বিদেশি মুদ্রা ভাণ্ডারের মধ্যে সোনা রয়েছে ২৬৭০ কোটি ডলারের। ২০১৭ সাল থেকে সোনার ভাণ্ডার বাড়ানোয় গতি এনেছে তারা। খোলা বাজার থেকে সোনা কেনার পাশাপাশি, শুল্ক দফতরের বাজেয়াপ্ত করা সোনার একাংশ আসে শীর্ষ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারে। অনেকেই মনে করছেন, সেই ভাণ্ডারের একাংশ বিক্রি করার পিছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, জালান কমিটির রিপোর্ট গ্রহণ করার পর থেকে শীর্ষ ব্যাঙ্ক নিজেদের তহবিল সংক্রান্ত কৌশল বদলে ফেলেছে। তহবিলের ভারসাম্য রাখার জন্যই হয়তো সোনা কেনাবেচা বাড়িয়ে দিয়েছে তারা। দ্বিতীয়ত, অতীতে মুদ্রার মাধ্যমে লেনদেন করাই ছিল দস্তুর। কিন্তু এখন সরাসরি তা সোনার মাধ্যমে করতে চাইছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। এ-ও তহবিলকে পোক্ত করার এক কৌশল হতে পারে। কারণ, সোনা বিক্রির চেয়ে সোনা কেনার পরিমাণ অনেকটাই বেশি।
জালান কমিটির রিপোর্ট শীর্ষ ব্যাঙ্ক গ্রহণের পরে বিভিন্ন মহল বলেছিল, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তাদের বাড়তি তহবিল হাতে রাখে মন্দা কিংবা আর্থিক সমস্যার মোকাবিলার জন্য। সেই তহবিল কমে গেলে ঝুঁকি বাড়তে পারে। সেই প্রেক্ষিতেই শীর্ষ ব্যাঙ্কের সোনা বিক্রির পর রাজনৈতিক আক্রমণ ধেয়ে আসছে কেন্দ্রের দিকে।