ফাইল চিত্র।
করোনার প্রথম দফার ধাক্কা কাটিয়ে যখন ভারত-সহ গোটা বিশ্বই একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, দ্বিতীয় ঢেউ তাতে বাদ সাধে। তার পরেও ভারতের অর্থনীতি চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে গতি পেয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির কাঠামো মজবুত রয়েছে। বাড়ছে বেসরকারি লগ্নি ও চাহিদা। বুধবার আর্থিক স্থিতিশীলতা রিপোর্টে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক এই সমস্ত আশার কথা শোনালেও, একই সঙ্গে সংশয়ের ক্ষেত্রগুলিকে আড়াল করেনি তারা। বরং রিপোর্টের মুখবন্ধে শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস স্পষ্ট মেনেছেন, চড়া মূল্যবৃদ্ধির হার উদ্বেগের বিষয়। বেসরকারি লগ্নি বা চাহিদা, দুই-ই এখনও প্রাক্-করোনা পর্বের চেয়ে নীচে। অর্থনীতিতে নতুন করে দুশ্চিন্তার কারণ হয়েছে দাঁড়িয়েছে ওমিক্রন। সব মিলিয়ে মোদী সরকার ২০২১-২২ অর্থবর্ষে হয়তো রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রায় (জিডিপি-র ৬.৮%) বেঁধে রাখতে পারবে না বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আরবিআই। পাশাপাশি, সতর্ক করেছে বেসরকারি ডিজিটাল মুদ্রার ঝুঁকি নিয়েও।
মঙ্গলবার ট্রেন্ডস অ্যান্ড প্রগ্রেস অব ব্যাঙ্কিং ইন ইন্ডিয়া, ২০২০-২১ রিপোর্টে শীর্ষ ব্যাঙ্কের বার্তা ছিল, অতিমারিতে বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে যেমন বেশ কিছু অনিশ্চয়তা রয়েছে, তেমন আছে আর্থিক ব্যবস্থার ঘুরে দাঁড়ানোর রসদও। তবে ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে ফের অনুৎপাদক সম্পদ মাথাচাড়া দিতে পারে বলে জানিয়ে তাদের পরামর্শ, ঝুঁকির বিষয়গুলি মাথায় রেখে উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে এবং পরিচালন ব্যবস্থা আরও জোরদার করে পরিকল্পনা তৈরি করা দরকার।
স্থিতিশীলতা রিপোর্টে করোনাকালে উপযোগী নীতি ও নিয়ন্ত্রণের জেরে আর্থিক ক্ষেত্র পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আরও সক্ষম হয়েছে বলে জানিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। তবে তাদের মতে, ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে গৃহঋণ, ক্ষুদ্রঋণ এবং ছোট শিল্পকে দেওয়া ঋণের ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকছে। তাই তাদের উপরে নজরদারি ব্যবস্থা জোরদার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে রিপোর্টে।
আরবিআই মনে করে, ওমিক্রন এবং চড়া মূল্যবৃদ্ধি সামগ্রিক ভাবে অর্থনীতি ঘিরেই দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে। যে কারণে খাদ্য ও জ্বালানির দামে রাশ টানতে জোগান ব্যবস্থা জোরদার করার পক্ষে সওয়াল করেছেন গভর্নর। স্থিতিশীলতা রিপোর্টে বলা হয়েছে, উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে সরকারের কর আদায়। ফলে কোষাগারের হালও ভাল। কিন্তু সম্প্রতি ৩.৭৩ লক্ষ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় বরাদ্দের জন্য যে আর্জি অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, তার ফলে ঘাটতিকে লক্ষ্যমাত্রায় বেঁধে রাখা কঠিন হতে পারে সরকারের পক্ষে। সব মিলিয়ে অর্থনীতির পালে হাওয়া দিতে টিকাকরণে গতি আনার পক্ষে সওয়াল করেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। আর সার্বিক ভাবে তাদের বার্তা, সকলের উন্নতির জন্য বৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা ও ও শক্তিশালী অর্থনীতি গড়তে দক্ষ ও মজবুত আর্থিক কাঠামো নিশ্চিত করতে দায়বদ্ধ আরবিআই।