ছবি রয়টার্স।
সুদের হারে (রেপো রেট) বদল নয়, জোর দেশের আর্থিক উন্নতিতে— এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ঋণনীতি ঘোষণা করল রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। সেই লক্ষ্য পূরণে নগদের জোগান বাড়াতে খোলা হল একাধিক পথ। তবে যতদিন না অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ায় ততদিন প্রয়োজন হওয়া মাত্র সুদ কমানোর দরজাও খোলা রেখেছে তারা। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ এখনও অর্থনীতিকে নতুন করে ধাক্কা দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করেনি আশ্বাস দিয়ে এ দিন শীর্ষ ব্যাঙ্কের বার্তা, তাদের এখন লক্ষ্য একটাই। যে করে হোক আর্থিক বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরানো। তার জন্য যা যা করতে হবে, করতে তৈরি তারা।
তবে বাড়তে থাকা সংক্রমণ যে চিন্তা বাড়াচ্ছে তা স্বীকার করেছেন আরবিআই গভর্নর শক্তিকান্ত দাস। বলেছেন, ‘‘সংক্রমণ বৃদ্ধি আরও বেশি অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। বিষয়টিতে কড়া নজর রাখতে হবে। বিশেষত স্থানীয় এবং আঞ্চলিক লকডাউন যেহেতু চাহিদার সাম্প্রতিক উন্নতিতে জল ঢালতে পারে এবং অর্থনীতির স্বাভাবিক হওয়ার প্রক্রিয়াকে পিছিয়ে দিতে পারে।’’
গত চার বারের মতো এ বারও যে সুদের হার বদলাবে না, সেটা প্রত্যাশিতই ছিল। বিশেষ করে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার যেখানে ৫% ছাড়িয়েছে। এ দিন শক্তিকান্তও মেনেছেন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা। তবে তাঁর ঘোষণা, ‘‘এ বারের ঋণনীতিতে অগ্রাধিকারের তালিকার শীর্ষে আর্থিক অগ্রগতি। তবে মূল্যবৃদ্ধিকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে।’’ যে কারণে অতিমারির দ্বিতীয় ঝাপটা অর্থনীতির বৃদ্ধিতে ফেরা বানচাল করবে কি না, এই আশঙ্কার মুখে দাঁড়িয়েও চলতি অর্থবর্ষে (২০২১-২২) ১০.৫% আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাসে এখনই কাঁচি চালানোর প্রয়োজন দেখছেন না তাঁরা।
তবে কৃষি থেকে শিল্প, নগদের জোগানে টান পড়লে যে বৃদ্ধির আশা জলে যাবে, তা বিলক্ষণ জানে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। যে কারণে এ বারের ঋণনীতিতে পুঁজি সরবরাহের একাধিক পদক্ষেপ করেছে তারা। যার মধ্যে অন্যতম সরকারকে সহজে তহবিলের ব্যবস্থা করে দিতে নতুন ব্যবস্থা জি-স্যাপ। এতে এপ্রিল-জুনে খোলা বাজার থেকে ১ লক্ষ কোটি টাকার সরকারি বন্ড কিনবে আরবিআই। এই পদক্ষেপ কেন্দ্রকে কম সুদে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহে সাহাষ্য করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অতিমারির সমস্যা মোকাবিলা করতে গিয়ে যখন নাজেহাল রাজ্যগুলি, তখন তাদের হাতেও নগদের জোগান বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে ঋণনীতিতে। এ জন্য স্বল্প মেয়াদে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক রাজ্য সরকারগুলিকে যে ঋণ দেয় (ওয়েজ় অ্যান্ড মিনস অ্যাডভান্স বা ডব্লিউএমএ) তার বাৎসরিক ঊর্ধ্বসীমা ৪৬% বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪৭,০১০ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে এককালীন ডব্লিউএমএ-র ব্যবস্থা করা হয়েছে, যার আওতায় মঞ্জুর করা হবে ৫১,৫৬০ কোটি টাকা।
একই ভাবে গ্রামের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের হাতে নগদ পৌঁছতে ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থাগুলিকে নগদ টাকা ধার দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে ঋণনীতি। এর জন্য অল ইন্ডিয়া ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনকে ৫০,০০০ কোটি টাকা ঋণ দেবে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। নাবার্ডকে ২৫,০০০ কোটি টাকা, ন্যাশনাল হাউসিং ব্যাঙ্ককে ১০,০০০ কোটি এবং সিডবিকে ১৫,০০০ কোটি দেওয়া হবে।