নেট মাধ্যমে তামকাজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ হলেও তা হচ্ছে বলে অভিযোগ। গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ
ফেসবুকের বিরুদ্ধে ‘অপকথায় মদত’ থেকে ‘বিদ্বেষ ছড়ানো’র অভিযোগ আগেই উঠেছে। এ বার নীতি ভেঙে তামাকজাত দ্রব্যের প্রচারের মাধ্যম হয়ে ওঠার অভিযোগ উঠেছে ফেসবুকের বিরুদ্ধে। খানিক অভিযোগ রয়েছে তুলনায় কুলিন ইনস্টাগ্রামের বিরুদ্ধেও।
জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ‘ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস’ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতেই দাবি করা হয়েছে যে, অনেক বিড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন করছে এবং বিক্রি বাড়াচ্ছে। সরাসরি ধূমপানের আহ্বান জানানো বিজ্ঞাপন না দিলেও ক্রেতাদের মধ্যে সংস্থার পরিচিতি তৈরি করছে ফেসবুক ব্যবহার করে।
এমনিতে ফেসবুকের মাধ্যমে কোনও রকম তামকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন করা যায় না। তবে সেই আইন ফাঁকি দিয়ে কী ভাবে বিভিন্ন বিড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা ফেসবুককে ব্যবহার করছে তা তুলে ধরা হয়েছে ‘ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস’-এর রিপোর্টে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১-এর অগস্টে তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, এই সময়কালে ২৭১টি ক্ষেত্রে সরাসরি বিড়ির ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন এবং ৭৩টি ক্ষেত্রে পরোক্ষ বিপণনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন বছর বা পুজো-পার্বনের শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে বিড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থার তরফে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মহিলাদের শুভেচ্ছা জানাতেও ফেসবুককে মাধ্যম করেছে বিড়ির প্রস্তুতকারী সংস্থা। অনেক সময়েই এর জন্য তৈরি পোস্টারে বিড়ির ছবি থাকছে। দামি গাড়ির মালিক বিড়ির প্যাকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন এমন ছবিও ফেসবুকে দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে। বলা হয়েছে, কোনও কোনও সংস্থা শিবরাত্রি উৎসব উপলক্ষেও বিড়ির বিজ্ঞাপন করেছে। যা আইনত অনুচিত বলেই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে।
ওই সংস্থার করা সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতে ২৬ কোটি ৭০ লাখ মানুষ ধূমপায়ী। এর মধ্যে ৭ কোটি ২০ লক্ষ বিড়ি খান। শুধু তাই নয়, সমীক্ষা বলছে যাঁরা বিড়ি খান তাঁদের অর্ধেকের বেশি ধূমপান শুরু করেছেন দশ বছর বয়স হওয়ার আগে। বিড়ি খান এমন ধূমপায়ীর সংখ্যা কম হলেও বিক্রি বেশি। ভারতে সিগারেটের তুলনায় আট গুণ বেশি বিড়ি বিক্রি হয়। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিড়ির বিজ্ঞাপনের ২৪ শতাংশ ক্ষেত্রে ধূমপানকে মজার এবং ইমেজ তৈরির মাধ্যম হিসেবে বর্ণনা করা হয়। ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক উৎসব, বিশিষ্টদের জন্মদিনকে কেন্দ্র করে বিজ্ঞাপন করা হয়। সেখানে সরাসরি বিড়ি কেনার কথা না বলে প্রস্তুতকারী সংস্থার পক্ষ থেকে ব্র্যান্ডের নাম ও ছবি-সহ শুভেচ্ছা বার্তা দেওয়া হয়। যা পরোক্ষ বিপণনের কাজ করে। তবে এর বেশিটাই ফেসবুকে। ইনস্টাগ্রামে এখনও পর্যন্ত এমন বিজ্ঞাপন ২ শতাংশ বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এর বাইরে হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ মেসেজ পাঠিয়েও বিজ্ঞাপন করে বিভিন্ন বিড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা। আর কমপক্ষে ৩০টি ফেসবুক পেজ রয়েছে যার মাধ্যমে বিড়ি খাওয়ায় উৎসাহ দেওয়া হয়। বিক্রিও করা হয় ফেসবুক ব্যবহার করে।