এই মুহূর্তে নতুন মাথাব্যথা কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডের (ইপিএফ) সুদ। প্রতীকী চিত্র
অবশেষে সংশোধন। বাজেটের দিন থেকে শুরু করে নাগাড়ে উত্থানের পরে সংশোধনের দেখা মিলল গত সপ্তাহে। সোমবার ৬১০ পয়েন্ট উঠে সেনসেক্স প্রথম বারের জন্য বন্ধ হয়েছিল ৫২ হাজারের উপরে (৫২১৫৪)। আর এই সর্বকালীন উচ্চতায় পা রাখার পরেই শুরু হয় পতন। মঙ্গলবার থেকে চার দিন বাজার নামে মোট ১২৬৪ পয়েন্ট। নিফটি-ও ওই ক’দিনে ৩৩৩ নেমে ১৫ হাজারের ঘর থেকে ফিরে আসে ১৪,৯৮২-তে। উপযুক্ত কারণ ছাড়াই বাজার অতি দ্রুত যে জায়গায় উঠেছিল, তাতে এই সংশোধন কাম্যই ছিল। ঝুঁকি ছিল, এত উঁচু বাজারে নতুন করে লগ্নিতে। মার্চ যে সূচক ২৫ হাজারের ঘরে পিছলে গিয়েছিল, মাত্র ১০/১১ মাসে তার ৫২ হাজারে লাফ অস্বাভাবিক ঠেকেছিল অনেকের কাছেই। বিশেষত যে বছরে অর্থনীতির ৭-৮ শতাংশ সঙ্কোচনের আশঙ্কা। ফলে এই পতনে বহু লগ্নিকারীই স্বস্তি
বোধ করছেন।
বরং এই মুহূর্তে নতুন মাথাব্যথা কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডের (ইপিএফ) সুদ। অছি পরিষদ বৈঠকে বসছে ৪ মার্চ। আলোচনা হতে পারে চলতি অর্থবর্ষের (২০২০-২১) সুদের পরিমাণ নিয়ে। ২০১৯-২০ সালে দেওয়া হয়েছে ৮.৫%। যদিও বিস্তর টালবাহানার পরে তাতে সায় দিয়েছে সরকার এবং তা কর্মীদের পিএফ অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে অনেক দেরিতে, গত বছরের শেষে। ২০১৮-১৯ সালে সুদ ছিল ৮.৬৫%। সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কা, চলতি অর্থবর্ষে কর্মীরা পিএফে আরও কম সুদ পেতে পারেন।
সূচকের সংশোধনজনিত পতনের আশঙ্কায় শেয়ার ভিত্তিক (ইকুইটি) ফান্ডের লগ্নিকারীরা ইউনিট বেচছেন কয়েক মাস ধরেই। ঝুঁকি এড়াতে ফান্ডে এসআইপি মারফত লগ্নি বেড়েছে। কারণ, সেনসেক্স-নিফ্টি এতটা উঠেছে ভবিষ্যতে অর্থনীতির উন্নতির আশায়, বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতির নিরিখে নয়। ফলে আশা বাস্তবায়িত হওয়ার পথে বাধা এলে সমূহ বিপদ। তার উপরে এই উত্থানে বড় মদত জুগিয়েছে বিদেশি আর্থিক সংস্থার লগ্নি। কোনও কারণে এই পুঁজি ভারত থেকে পাট গোটালে আচমকা ধস নামতে পারে বাজারে। খুশির কথা একটাই, এই দফার সংশোধনে বড় শেয়ারের তুলনায় কম পড়েছে মাঝারি এবং ছোট সংস্থার শেয়ার।
একটু বেশি আয়ের লক্ষ্যে বহু মানুষ এখন ঝুঁকছেন মিউচুয়াল ফান্ডের লগ্নিতে। করের দিক থেকেও যে লগ্নি বেশি লাভজনক। পরিসংখ্যান বলছে, এ দেশে ফান্ডগুলির মোট সম্পদ ২০১৪ সালের মে মাসে যেখানে ছিল ১০ লক্ষ কোটি টাকা, তা ২০১৭-র অগস্টে দাঁড়িয়েছে ২০ লক্ষ কোটিতে এবং গত নভেম্বর ৩০ লক্ষ কোটিতে। এই ভাবে বাড়তে থাকলে অনুমান, ২০২৫ সালে ফান্ড শিল্পে মোট সম্পদের পরিমাণ ছুঁয়ে ফেলবে ৪৫ লক্ষ কোটি টাকা এবং ২০৩০-এ ১০০ লক্ষ কোটি টাকা। বিএসই নথিবদ্ধ সব শেয়ারের মোট বাজার দরও সম্প্রতি ২০০ লক্ষ কোটি টাকা পেরিয়েছে। গত কয়েক দিন পতনের পরেও তা এখন রয়েছে ২০৩.৯৮ লক্ষ কোটি টাকায়।
গত সপ্তাহের কয়েকটি খবর—
n রুগ্ণ গৃহঋণ সংস্থা ডিএইচএফএল-কে কিনে নিতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সায় পেয়েছে পিরামল গোষ্ঠী।
n ব্যাঙ্ক লকারের ব্যাপারে গ্রাহকের কোনও লোকসান হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক সেই সংক্রান্ত দায় এড়াতে পারে না, মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ককে ছ’মাসের মধ্যে লকার সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছে।
n জানুয়ারিতে ভারতের রফতানি ৬.১৬% বেড়ে পৌঁছেছে ২৭৪৫ কোটি ডলারে। আমদানি বেড়েছে ২%, ছুঁয়েছে ৪২০০ কোটি ডলার। ফলে বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৪৫৫ কোটি ডলার।
(মতামত ব্যক্তিগত)