অর্থনীতির হাল ফেরানোর দায়ভার কেন্দ্রের উপরেই ঠেলল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
অর্থনীতিবিদদের একাংশ বলছেন, মূল্যবৃদ্ধির রক্তচক্ষু হাত-পা বেঁধেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের। চাহিদা বাড়ানোর পথ করে দিতে প্রয়োজন হলেও, এই দফায় সুদ কমানোয় সম্ভবত দাঁড়ি টানতেই হয়েছে। ফলে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তোলার দায় এখন পুরোটাই কেন্দ্রের ঘাড়ে। কার্যত এই বার্তাই যেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ২০১৯-২০ সালের বার্ষিক রিপোর্টে। তারা বলেছে, সংক্রমণ বাড়ার দরুন করোনা-সমস্যা কাটাতে আরও সময় লাগবে। চাহিদা ফিরতেও দেরি হবে। তবে ঠিক কতটা, তা নির্ভর করবে সরকারের উপরেই। তাদের বার্তা, অর্থনীতিকে কোভিড-পূর্ব অবস্থায় ফেরাতে কেনাকাটা বাড়াতে হবে সরকারকে। কারণ, বেসরকারি স্তরে কেনাকাটা বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, এটা কেন্দ্রের খরচ বাড়ানোরই সওয়াল।
বার্ষিক রিপোর্টে ব্যাপক আর্থিক সংস্কারের প্রয়োজনের কথা বলেছে আরবিআই। যা কোভিডজনিত ক্ষতিতে প্রলেপ দিয়ে স্থিতিশীল আর্থিক বৃদ্ধির জমি তৈরি করবে। অনুৎপাদক সম্পদের সমস্যা মোকাবিলা করতেও কেন্দ্রের কোর্টেই বল ঠেলেছে তারা। জোর দিয়েছে ব্যাঙ্কগুলিকে মূলধন জোগানোর পরিকল্পনা তৈরি করায়। সরকারি, বেসরকারি সকলকেই।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বার্ষিক রিপোর্ট বলছে, পরিবহণ পরিষেবা, হোটেল, পর্যটন, বিনোদনের মতো ক্ষেত্রে বেসরকারি খরচই ছিল বেশি। জিডিপির প্রায় ৬০%। আর সেই ক্ষেত্রেই কোভিড সব থেকে বেশি আঘাত হেনেছে। যতক্ষণ না খরচ করার মতো যযেষ্ট টাকা হাতে আসছে, ততক্ষণ ওই সব ক্ষেত্রে বেসরকারি খরচ বাড়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই। তাই আপাতত সার্বিক ভাবে চাহিদার ঘাটতি পোষানোর জন্য সরকারি খরচ বৃদ্ধি জরুরি।
তাদের দাবি, প্রায় এক দশক আগে বিশ্ব জোড়া মন্দা ভারতের অর্থনীতির যতটা ক্ষতি করেছিল, তার অনেক বেশি করেছে অতিমারি। কারণ, মন্দার আগে দেশের অর্থনীতি ছিল তেজী। কিন্তু করোনার আগে চলছিল ঝিমুনি ভাব। প্রতারণা ধরতেই পেরোচ্ছে সময়: গত কয়েক বছরে একের পর এক সামনে এসেছে ব্যাঙ্ক প্রতারণার ঘটনা। যা আটকাতে বিভিন্ন সময় কড়া বিধিও এসেছে কিছু। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বার্ষিক রিপোর্ট বলছে, যে দিন প্রতারণা হল এবং যে দিন ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান তা ধরতে পারল, মাঝের এই সময়টা গত অর্থবর্ষে দাঁড়িয়েছে গড়ে দু’বছর। ১০০ কোটি টাকার বেশি প্রতারণার ক্ষেত্রে তা চিহ্নিতকরণের গড় সময়টা আরও অনেক বেশি। শুধু তাই নয়, গত অর্থবর্ষে ১ লক্ষ বা তার বেশি টাকা প্রতারণার ঘটনা সংখ্যার দিক থেকে বেডে়ছে ২৮% আর অর্থের নিরিখে ১৫৯%। যেগুলির সূত্রপাত হয়েছিল আগের কয়েক বছরের মধ্যে।