রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। —ফাইল চিত্র।
চলতি অর্থবর্ষে জিডিপি বৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়িয়ে ভারতীয় অর্থনীতির উন্নতি নিয়ে ভরসা দিল রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। তবে একই সঙ্গে স্পষ্ট বার্তা, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে পা ফেলা হবে সাবধানে। খুচরো বাজারে তাকে ৪ শতাংশে বাঁধতে নাছোড়বান্দা তারা। স্থায়ী ভাবে সেই লক্ষ্যে পৌঁছনো না গেলে হয়তো সুদ কমানোর কথা ভাবা হবে না। যে কারণে শুক্রবার ঘোষণা করা ঋণনীতিতেও সুদের হার (রেপো রেট) অপরিবর্তিত থাকল। শিল্প-সহ বিভিন্ন মহলের তরফে চাপ সত্ত্বেও গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এই নিয়ে টানা আট বার শীর্ষ ব্যাঙ্কের সুদ স্থির রইল ৬.৫ শতাংশে।
দেশে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার পাঁচ শতাংশের নীচে নেমেছে ইতিমধ্যেই। কিন্তু খাদপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এখনও ৮ শতাংশের বেশি। এটাই যে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ককেও উদ্বিগ্ন রেখেছে, তা এ দিন স্বীকার করেছেন আরবিআই গভর্নর শক্তিকান্ত দাস। তিনি বলেন, ‘‘খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি সংক্রান্ত অনিশ্চয়তায় নজরদারি চালানো জরুরি।...সুদের হার কমানোর জন্য স্থায়ী ভাবে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির ৪ শতাংশে নামা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাই। যখন দেখব তা আর বাড়বে না, তখন ঋণনীতি সংক্রান্ত পদক্ষেপ করার কথা ভাবব।’’ ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকেও নজর রেখেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। কারণ, এর জেরেই আন্তর্জাতিক বাজার থেকে পণ্য সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে মূল্যবৃদ্ধিতেও।
তবে অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের বক্তব্য, ‘‘সম্প্রতি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক কেন্দ্রকে ২.১১ লক্ষ কোটি টাকা ডিভিডেন্ড দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। শুধু খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি বা জোগানের সমস্যা নয়, সেই টাকা খরচের প্রভাবও খুচরো মূল্যবৃদ্ধিতে রসদ জোগাতে পারে। আমার ধারণা, সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখে নিতে চায় আরবিআই।’’
আইআইটির অর্থনীতির অধ্যাপক রাজেন্দ্র পরামানিক বলছেন, সুদের হার কিছুটা চড়া থাকা সত্ত্বেও দেশে আর্থিক বৃদ্ধির হার গত অর্থবর্ষে ৮% ছাড়িয়েছে। ফলে বৃদ্ধির খাতিরে সুদ কমানোর তাড়া আর নেই। তার উপর এ বার গ্রীষ্মে চড়া তাপপ্রবাহের মতো চরম আবহাওয়ার কারণে চাষের ক্ষতি আগামী দিনে যে খাদ্যপণ্যের দামকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। বর্ষা যদি পূর্বাভাস মাফিক না হয়, তা হলে সমস্যা আরও বাড়বে। তাঁর কথায়, ‘‘ফলে এখনই কোনও ঝুঁকি নেবে না আরবিআই। সব কিছু দেখে নিয়ে অর্থবর্ষ শেষে সুদ কমাতে উদ্যোগী হলেও হতে পারে।’’