Repo Rate

রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের মধ্যপন্থা অসন্তুষ্ট করেনি বাজারকে

টানা ১১ বার রেপো রেট (যে সুদে আরবিআই ধার দেয় বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ককে) ৬.৫ শতাংশে অপরিবর্তিত রয়ে গেল।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৬:১৬
Share:

মধ্যপন্থা বেছে নিয়ে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি কমিটি বুঝিয়ে দিয়েছে, দু’টিকেই সমান গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। —ফাইল চিত্র।

প্রশ্ন ছিল, খুচরো বাজারে দ্রুত বেড়ে ওঠা মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, নাকি ঝিমিয়ে পড়া উন্নয়নের চাকায় গতি সঞ্চয় করতে? এমন এক সঙ্কটে মধ্যপন্থা বেছে নিয়ে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি কমিটি বুঝিয়ে দিয়েছে, দু’টিকেই সমান গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। তাদেরই বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ ৬% সহনসীমার উপরে মাথা তোলা মূল্যবৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে এ বারও সুদ কমানোর পথে হাঁটেনি আরবিআই। ফলে এই নিয়ে টানা ১১ বার রেপো রেট (যে সুদে আরবিআই ধার দেয় বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ককে) ৬.৫ শতাংশে অপরিবর্তিত রয়ে গেল।

Advertisement

তবে মাথাব্যথা ছিল উন্নয়ন নিয়েও। এই অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) জিডিপি বৃদ্ধির হার ৫.৪ শতাংশে নেমেছে। তাকে ঠেলে তুলতেই সুদ কমানোর জন্য চাপ আসছিল বিভিন্ন মহল থেকে। এমনকি দুই গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবং পীযূষ গয়ালও সুদ ছাঁটাইয়ের পক্ষে সওয়াল করেন। সুদ না কমালেও শিল্প-বাণিজ্যে টাকার জোগান বাড়ানোর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের নেতৃত্বাধীন ঋণনীতি কমিটি। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির ‘ক্যাশ রিজ়ার্ভ রেশিও’ (সিআরআর) বা নগদ জমার অনুপাত ৪.৫% থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৪ শতাংশে নামিয়েছে। প্রতিটি ব্যাঙ্ককে তাদের মোট আমানতের যে অংশ শীর্ষ ব্যাঙ্কের কাছে বাধ্যতামূলক ভাবে জমা রাখতে হয়, সেটাই হল সিআরআর। এর হার কমায় ফলে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় ১.১৬ লক্ষ কোটি টাকা নগদের জোগান বাড়বে। বৃদ্ধির চাকায় গতি আনাই এর উদ্দেশ্য। বর্তমান সঙ্কটে ভারসাম্য রক্ষার খাতিরে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়েছে শিল্প-বাণিজ্য থেকে শেয়ার সূচক। শুক্রবার ঋণনীতির দিন ৫৭ পয়েন্ট নামে সেনসেক্স, নিফ্‌টি ৩১।

গত সপ্তাহে সামগ্রিক ভাবেও সেনসেক্স চাঙ্গা ছিল। উঠেছে মোট ১৯০৬ পয়েন্ট। পৌঁছেছে ৮১,৭০৯ অঙ্কে। ২৬ সেপ্টেম্বর ৮৫,৮৩৬ ছুঁয়ে নজির গড়ার পরে এই সূচক ২১ নভেম্বরে নেমেছিল ৭৭,১৫৬-এ। অর্থাৎ ৮৬৮০ পয়েন্ট পড়েছিল সর্বোচ্চ জায়গা থেকে। শতাংশের হিসাবে ১০.১১%। সেখান থেকে সূচক ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আশা, অক্টোবর-ডিসেম্বরে সংস্থাগুলির আর্থিক ফল ভাল হবে। নভেম্বরে জিএসটি বাবদ সংগ্রহ ৮.৫% বেড়ে পৌঁছেছে ১,৮২,২৬৯ কোটি টাকায়। বাজারে অনেকটা সংশোধন হওয়ায় এবং অর্থনীতির ঝিমুনি ভাব কাটার লক্ষণে ফিরতে শুরু করেছে বিদেশি লগ্নিও। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি এ দেশে ঢেলেছে ১১,৯৩৪ কোটি টাকা। নভেম্বরে দেশের মধ্যে পাইকারি গাড়ি বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৪%।

Advertisement

সপ্তাহের অন্যান্য খবর ছিল—

  • নভেম্বরে পিএমআই শিল্প সূচক কমে হয়েছে ৫৬.৫। অক্টোবরে ছিল ৫৭.৫। পিএমআই পরিষেবা সূচক অক্টোবরের ৫৮.৫ থেকে কমে হয়েছে ৫৮.৪। এই দুই সূচক ৫০-এর বেশি থাকার অর্থ বৃদ্ধি।
  • রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক চলতি অর্থবর্ষে জিডিপি বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৭.২% থেকে কমিয়ে করেছে ৬.৬%। অন্য দিকে, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৪.৫% থেকে বাড়িয়ে করেছে ৪.৮%।
  • আগামী বুধবার এই প্রথম বাজারে শেয়ার ছেড়ে (আইপিও) ৮০০০ কোটি টাকা তুলতে চলেছে বিশাল মেগামার্ট।
  • সম্প্রতি অনেকটা নামার পরে ২৯ নভেম্বর শেষ হওয়া সপ্তাহে ১৫০ কোটি ডলার বেড়ে বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার পৌঁছেছে ৬৫,৮০৯ কোটিতে।

বিভিন্ন খবরের ভিত্তিতে যা আশা করা যায়, তা হল—

  • সুদের হার (রেপো রেট) এ বারও অপরিবর্তিত থাকায় জানুয়ারি-মার্চে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলির সুদে হেরফের হওয়ার সম্ভাবনা কম।
  • ব্যাঙ্কগুলির হাতে ১.১৬ লক্ষ কোটি টাকা অতিরিক্ত নগদ আসায় আমানতে সুদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম। বরং কোনও কোনও মেয়াদে তা কমতে পারে।
  • ভাল বর্ষার কারণে ও শীতের মরসুমে খাদ্যপণ্য বিশেষ করে আনাজ, ফল ইত্যাদির দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার সম্ভাবনা।
  • মূল্যবৃদ্ধি মাথা নামালে সুদ কমার সম্ভাবনা থাকবে ফেব্রুয়ারিতে।
  • অর্থনীতির ঝিমুনি কাটলে ভারতে বিদেশি লগ্নি আসা বহাল থাকবে। ফলে চাঙ্গা থাকতে পারে সূচক।
  • সুদ কমার পরিস্থিতি তৈরি হলেও চাঙ্গা থাকবে বাজার। তেতে উঠবে বন্ড বাজারও। ফলে আকর্ষণ বহাল থাকবে মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নিতে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement