আমেরিকার সঙ্কট থেকে শিক্ষা
Reserve bank of India

ব্যাঙ্কের ব্যবসায়িক কৌশলে কড়া নজর আরবিআইয়ের

সম্ভাব্য সমস্যা এড়াতে এ বার রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক বোঝার চেষ্টা করবে ভারতের ব্যাঙ্কগুলি অতি মুনাফা এবং দ্রুত উন্নতির জন্য ব্যবসার ক্ষেত্রে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কোনও কৌশল ব্যবহার করছে কি না।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

মুম্বই শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:১৩
Share:

এ বার রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক দেশের সমস্ত ঋণদাতা সংস্থার উপর কড়া নজর রাখছেন। ফাইল ছবি।

কোভিডের আঘাত কাটিয়ে পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই চড়া মূল্যবৃদ্ধি ঘুম কেড়েছিল গোটা বিশ্বের। তাকে যুঝতে সর্বত্র দ্রুত গতিতে সুদের হার উঁচু হওয়ার পরে এ বার নতুন মাথাব্যথা ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক স্বাস্থ্য নিয়ে আশঙ্কা। আমেরিকা এবং ইউরোপে একাধিক বড় মাপের ব্যাঙ্কের মুখ থুবড়ে পড়াই এর প্রধান কারণ। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক যদিও বার বার বলছে, ভারতে চিন্তা করার মতো কিছু ঘটেনি। বরং অনুৎপাদক সম্পদ কমিয়ে এবং মুনাফা বাড়িয়ে এ দেশের ব্যাঙ্কিং শিল্প তার পায়ের নীচের জমি পোক্ত করেছে। তবে তার পরেও যে দুশ্চিন্তা যাচ্ছে না, বৃহস্পতিবার তা স্পষ্ট হল রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের বার্তায়। তিনি বললেন, ব্যবসার পথ বা কৌশল যদি ভাল না হয়, তবে সঙ্কট দেখা দিতে পারে। যেটা আমেরিকায় হয়েছে। তাই দেশের সমস্ত ঋণদাতা সংস্থার উপর কড়া নজর রাখছেন তাঁরা। খতিয়ে দেখা হবে তাদের ব্যবসার মডেল বা কৌশল।

Advertisement

শক্তিকান্তের দাবি, সম্ভাব্য সমস্যা এড়াতে এ বার রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক বোঝার চেষ্টা করবে ভারতের ব্যাঙ্কগুলি অতি মুনাফা এবং দ্রুত উন্নতির জন্য ব্যবসার ক্ষেত্রে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কোনও কৌশল ব্যবহার করছে কি না। দেশীয় ব্যাঙ্ক শিল্প যথেষ্ট মজবুত জমির উপরে দাঁড়িয়ে আছে বলে অবশ্য এ দিনও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, কম সময়ের মধ্যে দ্রুত চড়া সুদ নিয়ে আরবিআই যে আগে থেকে সাবধান হতে চাইছে সেটা পরিষ্কার। যে কারণে এ দিন ব্যাঙ্কগুলির পরিচালকদেরও চোখ খুলে এগোনোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এক অনুষ্ঠানে এ দিন শক্তিকান্ত বলেন, ‘‘আমেরিকা এবং ইউরোপের বেশ কিছু ব্যাঙ্কের সমস্যা যে প্রশ্নটিকে সামনে এনেছে তা হল, ওই সব ব্যাঙ্কের ব্যবসায়িক মডেল কি সঠিক ছিল!’’ তাঁর মতে, নিরাপদ ভেবে যে পথে ব্যবসা চালিয়েছে আমেরিকার সিলিকন ভ্যালির মতো ব্যাঙ্ক, তা-ই শেষে সমস্যার প্রধান কারণ হয়েছে। একেবারে গোড়ায় গলদ দেখা দিয়েছে। সম্পদকে ছাড়িয়ে গিয়েছে দায়। এই পরিস্থিতিতে আরবিআই ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলির ব্যবসার কৌশল গভীর ভাবে খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছে বলে জানান তিনি। ব্যবসায়িক পরিকল্পনাগুলির মধ্যে কোনও ত্রুটি আছে কি না, তা চিহ্নিত করাই এর উদ্দেশ্য। কারণ, অনেক সময় তাতে এমন কিছু ঝুঁকি লুকিয়ে থাকে, যা পরে বড় মাপের সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘সমস্যায় পড়া আমেরিকা এবং ইউরোপের ব্যাঙ্কগুলির ব্যবসার পরিকল্পনায় এমন কিছু ঝুঁকি ছিল, যা আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়েছে তেমন গুরুতর নয়। কিন্তু পরে সেগুলিই সমস্যা সৃষ্টি করেছে। বিশ্লেষকেরা বলেছেন যে, সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্ক ধসে পড়ার কারণ ব্যাঙ্কের সম্পদ এবং দায়ের মধ্যে অসামঞ্জস্যতা।’’

Advertisement

দেশে ব্যাঙ্কের ঝুঁকিগুলির প্রতি নিয়মিত নজর রাখার পাশপাশি তাদের কাছে মূলধন এবং নগদের পরিমাণে যাতে কোনও ঘাটতি না থাকে, তা নিশ্চিত করার উপর ব্যাঙ্ক পরিচালক এবং ডিরেক্টদের জোর দিতে বলেছেন শক্তিকান্ত। হাতে মূলধন এবং নগদের অঙ্ক বাড়াতে উদ্যোগী হতেও পরামর্শ দিয়েছেন ব্যাঙ্ক কর্তাদের।

তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, আরবিআইয়ের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির করা সঠিক পদক্ষেপই আমেরিকা এবং ইউরোপের ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের সমস্যার প্রভাব ভারতীয় ব্যাঙ্কিং শিল্পে পড়তে দেয়নি। ব্যাঙ্কগুলির উপর নজরদারির জন্যই গত বছর কলেজ অব সুপারভাইজ়র্স গঠন করে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। এ দিনের অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল যারা।

শক্তিকান্তের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় ব্যাঙ্ক শিল্পে অনুৎপাদক সম্পদের হার এখন মোট ঋণের অনুপাতে ৪.৪১ শতাংশ। দু’বছর আগে যা ছিল ৭.৩ শতাংশ। গত ডিসেম্বরের হিসাব অনুযায়ী ভারতীয় ব্যাঙ্ক শিল্পে ঋণের অনুপাতে মূলধনের হার ১৬.১ শতাংশ। যা ন্যূনতম প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। এই মজবুত আর্থিক ভিতের উপর দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাঙ্ক শিল্প যে কোনও আর্থিক বা অন্য সমস্যার মোকবিলা করতে সক্ষম, মন্তব্য আরবিআই গভর্নরের। তাঁর দাবি, তাই যাতে আর্থিক অবস্থার অবনতি না হয়, তা নিশ্চিত করতে ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের অভ্যন্তরীণ পরিচালন ব্যবস্থার উপর বিশেষ নজর রাখা জরুরি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement