প্রতীকী ছবি।
যেমন ভাবা হয়েছিল, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই পুজোর মুখে আরও ৫০ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট (যে সুদে ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দেয় আরবিআই) বাড়িয়েছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। টানা চার দফার মোট ১৯০ বেসিস পয়েন্ট সুদ বেড়ে পৌঁছেছে ৫.৯ শতাংশে। পাশাপাশি আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৭.২% থেকে কমিয়েছে ৭ শতাংশে। বিশ্ব অর্থনীতির যা হাল, তাতে ৭% বৃদ্ধি যথেষ্ট ভাল। যদিও চিন্তা বহাল রেখে মূল্যবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৭ শতাংশেই ধরে রেখেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক।
এর আগে আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজ়ার্ভ ৭৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ বাড়ানোয় ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছিল বিশ্ব বাজারে। আতঙ্কে সেনসেক্স নেমেছিল টানা সাত দিন। ডলারের দাম পৌঁছেছিল সর্বকালীন উচ্চতায়। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ বাড়ানোর পরে ডলারের দাম ৮২ টাকার উপরে উঠলেও, শেয়ার বাজারের ক্ষেত্রে হয়েছে ঠিক উল্টো। সুদ বাড়ছে এবং আর্থিক বৃদ্ধি কমতে পারে জানার পরেও উত্থান দেখা গিয়েছে সূচকে। সুদ বৃদ্ধির দিনে সেনসেক্স বাড়ে ১০১৭ পয়েন্ট। নিফ্টি ২৭৬ পয়েন্ট। মূল্যবৃদ্ধির পূর্বাভাস একই জায়গায় ধরে রাখা, দু’বছরে তা ৪ শতাংশে নামানোর বার্তা, পতনের পরে কম দামে শেয়ার কেনার সুযোগ, দেশে পর্যাপ্ত বর্ষা এবং সংস্থার ভাল ফলের আশা টেনে তুলেছে বাজারকে।
তবে বিভিন্ন মূল্যায়ন সংস্থা থেকে শুরু করে বিশ্ব ব্যাঙ্কও আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে। ফলে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়, সে দিকে চোখ থাকবে লগ্নিকারীদের। তা ছাড়া পরের সপ্তাহেই প্রকাশিত হবে সেপ্টেম্বরের মূল্যবৃদ্ধি এবং অগস্টের শিল্পবৃদ্ধির হার। সেই পরিসংখ্যানেও নজর থাকবে বাজারের। ৩০ সেপ্টেম্বর ছিল বাজারে নথিভুক্ত সমস্ত সংস্থা বার্ষিক সাধারণ সভার শেষ দিন। সাধারণত, বার্ষিক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হয় এই দিনে। লগ্নিকারীদের এখন দেখে নিতে হবে যে সংস্থার শেয়ারে টাকা রেখেছেন, তাদের ঘোষিত ডিভিডেন্ড ঠিক মতো অ্যাকাউন্টে ঢুকছে কি না।
এরই মধ্যে অবশ্য চড়া মূল্যবৃদ্ধির বাজারে কিছু ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে সুদ বাড়ানো হয়েছে। তবে এত কম হারে সুদ বেড়েছে যে, বহু প্রকল্পের ক্ষেত্রেই এখনও তা রয়ে গিয়েছে মূল্যবদ্ধির (৭%) নীচে। ফলে এতে সুদ নির্ভর সাধারণ মানুষের খুব একটা উপকার হবে বলে মনে হচ্ছে না।
এ দিকে, নেটে ব্যবহারের জন্য শীঘ্রই বাজারে ডিজিটাল মুদ্রা বা ই-রুপি আনা হবে বলে ঘোষণা করেছে আরবিআই। এই বিষয়টি মানুষের কাছে একেবারে নতুন। অন্যান্য দেশেও এখনও সরকারি ভাবে এ ধরনের মুদ্রা চালু হয়নি। ফলে এর বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা-অসুবিধাগুলির দিকে নজর রেখে এগোতে হবে। এমনিতে বলা হয়েছে খুচরো লেনদেন এবং বিশেষ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাইকারি লেনদেনের জন্য আলাদা ব্যবস্থা আনা হবে। তবে এতে শুরু থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে বিষয়টি ভাল করে বুঝে নিতে হবে। বিশেষত যে ব্লকচেন প্রযুক্তির উপরে দাঁড়িয়ে এই ডিজিটাল মুদ্রা আসবে, তার সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নিতে পারলে ভাল।
পুজোর আগেই পেরিয়ে এসেছি ২০২২-২৩ সালের প্রথমার্ধ। এই ছ’মাস বিশ্ব অর্থনীতি বিশেষত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নানা সমস্যায় ভুগেছে। তবে ভারত তুলনায় ভাল জায়গায় থেকেছে। তেল ও ডলারের ঊর্ধ্বমুখী দাম বেগ দিলেও, বৃদ্ধির নিরিখে ভারত থেকেছে প্রথম সারিতে। এই অগ্রগতি কিছুটা প্রতিফলিত হবে শেষ ত্রৈমাসিক এবং ষান্মাসিক আর্থিক ফলাফলে।
জুলাই-সেপ্টেম্বরের ফল প্রকাশিত হতে শুরু করবে চলতি সপ্তাহ থেকেই। আশা ব্যাঙ্কিং শিল্প এ বার ভাল ফল করবে। বিশেষ করে বিভিন্ন শিল্পে প্রাণ ফেরায় দেশে তাদের ঋণের চাহিদা বেড়েছে। মাথা তুলেছে সুদ বাবদ আয়। নামতে শুরু করেছে অনুৎপাদক সম্পদ। অন্য দিকে পশ্চিমী দুনিয়ায় মন্দার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় তার আঘাত পৌঁছবে রফতানি প্রধান শিল্প বিশেষত তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের উপরে।
সেপ্টেম্বরের শেষে শুরু হয়েছে উৎসবের মরসুম। ভোগ্যপণ্যের বিক্রি বাড়ে এ সময়ে। তার আগেই গত মাসে জিএসটি জমা পড়েছে প্রায় ১.৪৮ লক্ষ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ২৬% বেশি। উৎসবের মরসুমে তা আরও বৃদ্ধির আশা। এ সবের সদর্থক প্রভাব দেখা যেতে পারে ত্রৈমাসিক ফল এবং শেয়ার দরে।
(মতামত ব্যক্তিগত)