—প্রতীকী চিত্র।
শিল্প-সহ বিভিন্ন মহল সুদ কমানোর দাবি তুললেও, খাবারের দাম চড়ে থাকায় টানা ন’টি ঋণনীতিতে তা অপরিবর্তিত রেখেছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। তবে কেন্দ্রের আর্থিক সমীক্ষায় প্রস্তাব ছিল, খাদ্যপণ্য ও জ্বালানির মতো সংবেদনশীল পণ্যগুলির দামকে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির সার্বিক হিসাব থেকে বাদ দেওয়া ভাল। কারণ, বিশেষত খাদ্যপণ্যের অস্থির দর গোটা পরিসংখ্যানকে বেশি চড়িয়ে দেয়। বরং সুদ নির্ধারিত হোক খুচরো বাজারে বাদবাকি জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির (কোর ইনফ্লেশন) নিরিখে। যা এখন ৩ শতাংশের কাছে। অর্থাৎ অবিলম্বে সুদ কমানো সম্ভব। এ বার এই বিতর্কে সরকারি মহলের সুপারিশকে কার্যত নস্যাৎ করলেন আরবিআইয়ে কেন্দ্রের মনোনীত আমন্ত্রিত সদস্যেরাই। বললেন, খাবার অন্যতম জরুরি বিষয়। সেটি-সহ সামগ্রিক মূল্যবৃদ্ধিই মানুষের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে।
গত মাসেই খুচরো মূল্যবৃদ্ধি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ৪% লক্ষ্যের নীচে নেমেছে। তার পরেই সুদ কমানোর দাবি জোরালো হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহলের মতে— এক, খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে না এলে হয়তো সুদ ছাঁটবে না আরবিআই। দুই, মূল্যবৃদ্ধি ৪ শতাংশের নীচে ধারাবাহিক ভাবে থাকছে কি না, সেটাও আগে নিশ্চিত করবে তারা। তবে এই নিরিখে ফের খাদ্যপণ্যের দাম বাদে মূল্যবৃদ্ধির হিসাব কষার তত্ত্ব তুলে আনছেন একাংশ। কিন্তু রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের তিন আমন্ত্রিত সদস্যের অন্যতম শশাঙ্ক ভিডের কথায়, ‘‘আমরা যদি সামগ্রিক মূল্যবৃদ্ধির একটি মাত্র অংশকে (কোর ইনফ্লেশন) গুরুত্ব দিই, তা হলে দামের সামগ্রিক চাপ বোঝা সম্ভব নয়। আর তা যদি করাও হয়, তবু তার উপরে খাবারদাবার এবং জ্বালানির দামের প্রভাব পড়বে না এমনটা নয়। এমনকি, সেগুলির দামের অস্থিরতার প্রভাবও কোর ইনফ্লেশনে পড়তে পারে।’’
অপর আমন্ত্রিত সদস্য জয়ন্ত আর বর্মা বলছেন, ‘‘খাদ্যপণ্যের চড়া মূল্যবৃদ্ধি লক্ষ্যে পৌঁছতে বাধা দিচ্ছে বটে। তবু ঋণনীতি কমিটির গোলপোস্ট বদল করে কোর ইনফ্লেশনের পক্ষে মত দেওয়া ঠিক নয়। খাদ্যপণ্যের দামের প্রভাব কোর ইনফ্লেশনে পড়বে কি না, সেই প্রশ্নও থাকছে।’’ তৃতীয় আমন্ত্রিত সদস্য অসীমা গয়াল বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের উপরে সামগ্রিক মূল্যবৃদ্ধিই প্রভাব ফেলে। তবে ঋণনীতি কমিটির উচিত কোর ইনফ্লেশনে জোর দেওয়া।’’ বর্মার অভিমত, কোর ইনফ্লেশনকে প্রধান মাপকাঠি করা হলেও তার লক্ষ্য একই রাখা হবে এমন না-ও হতে পারে। বর্মা এবং গয়াল শেষ ঋণনীতি বৈঠকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন।