শক্তিকান্ত দাস।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সস্প্রতি টানা দু’দফায় ৯০ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট (যে সুদে ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয় তারা) বাড়িয়েছে। তার পরেই সমস্ত ব্যাঙ্কে ঋণে সুদ বেড়েছে লাফিয়ে। তবে মূল্যবৃদ্ধির আবহে আমানতে সে ভাবে না বাড়ায় ক্ষুব্ধ সুদ নির্ভর মানুষ। শুক্রবার শীর্ষ ব্যাঙ্ক গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের বার্তা, ব্যাঙ্কে ঋণ বাড়তে শুরু করলেই আমানতে সুদের হার বাড়ে। দেশে সেই সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
ব্যাঙ্ক অব বরোদা আয়োজিত এক সভায় এ দিন শক্তিকান্ত বলেন, ‘‘সমস্ত ব্যাঙ্কে ঋণের চাহিদা বাড়ছে। ফলে আমানতেও সুদের হার বাড়ার সম্ভাবনা। কারণ, ঋণ দিতে ব্যাঙ্কের হাতে যে তহবিল রয়েছে, তার অনেকটাই বেরিয়ে যাবে। ফের তহবিল সংগ্রহের জন্য আমানত পেতে হবে। সেই লক্ষ্যে ব্যাঙ্কগুলি সুদ বাড়িয়ে গ্রাহক টানবে।’’
বিশেষজ্ঞ মহলের অনেকেরই অবশ্য প্রশ্ন, দেশে চাহিদা বাড়লে তবেই তো শিল্প সংস্থাগুলি লগ্নির জন্য ঋণ পেতে ব্যাঙ্কের দ্বারস্থ হবে। কিন্তু অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই চাহিদা কতটা বাড়ছে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তার উপরে সুদের হার চড়তে থাকায় ঋণ নেওয়ার খরচও বেশি। যদিও শক্তিকান্তের আশ্বাস, ভারতের অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে। বাড়তে শুরু করেছে চাহিদা। গাড়ি, ট্রাক্টর ইত্যাদির বিক্রি বেড়েছে। ইতিমধ্যেই ব্যাঙ্কগুলিতে ঋণের চাহিদা বেড়েছে ১৪%। চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক অর্থাৎ জুলাই থেকে তা আরও বাড়বে।
একাংশ মনে করাচ্ছে, মূল্যবৃদ্ধি থেকে এখন ব্যাঙ্কে সুদের হার কম। অর্থাৎ তার প্রকৃত আয় ঋণাত্মক। যা জমছে, তার বেশি খরচে হচ্ছে। তাঁদের প্রশ্ন, মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানা গেলেই কম সুদের জমানা ফিরবে। ফলে জমায় রিটার্ন বৃদ্ধির সুযোগ মিলবে? শক্তিকান্ত বলেছেন, ‘‘মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পড়াতে তাঁরা যে পদক্ষেপ করছেন, তাতে ব্যাঙ্কের জমা টাকায় সুদ কখনও নেতিবাচক হবে না।’’
টাকার দাম নিয়েও এসেছে আশ্বাস। শক্তিকান্ত বলেছেন, অধিকাংশ দেশের তুলনায় ভারতীয় মুদ্রার পতনের গতি অনেক কম। বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার পোক্ত। তবে এ দিনও পড়েছে টাকা। ৫ পয়সা বেড়ে এক ডলার হয়েছে ৭৯.৯০ টাকা। পতন আটকাতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ডলার ছাড়ার জেরে বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার আরও কমেছে। শক্তিকান্তের দাবি, "আমরা ছাতা কিনি বৃষ্টির সময় ব্যবহার করার জন্যই।" তিনি বরং বলেন, টাকার দাম কতটা পড়ল সেটা নিয়ে আরবিআই ভাবছে না। নিশ্চিত করছে, পতন যেন হুড়মুড়িয়ে না হয়।
তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মূল্যবৃদ্ধি যে ভারতের অর্থনীতির সামনে চ্যালেঞ্জ, তা মেনেছেন গভর্নর। কারণ এর ফলে অশোধিত তেল-সহ পণ্য আমদানির খরচ বেড়েছে। যা ঠেলে তুলেছে পণ্যের দামকে।