রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন ফাইল ছবি।
কখনও ২০৪৭ সালে উন্নত দেশ হয়ে ওঠার স্বপ্ন ফেরি করছে মোদী সরকার, কখনও ভারতকে তুলে ধরছে বিশ্ব অর্থনীতির ‘উজ্জ্বল বিন্দু’ হিসাবে। কিন্তু আশঙ্কার মেঘ যে কাটেনি, তা ফের স্পষ্ট অর্থনীতিবিদদের বার্তায়। রবিবার এক সাক্ষাৎকারে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন বলেন, ‘‘ভারত বিপজ্জনক ভাবে হিন্দু আর্থিক বৃদ্ধির কাছাকাছি দাঁড়িয়ে।’’ অর্থাৎ ১৯৫০ থেকে ’৮০ পর্যন্ত যে সময়টাতে দেশে বৃদ্ধির হার তলানিতে ছিল (গড়ে প্রায় ৪%)। জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক জয়তী ঘোষের বক্তব্য, মূল্যবৃদ্ধি ধরে ২০১৪-১৫ সাল থেকে দেশে মাথাপিছু আয় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে ঠিকই। কিন্তু চড়া দামের হিসাবকে সরিয়ে রাখলে সেই আয়ের প্রকৃত বৃদ্ধি অনেক কম।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এপ্রিল-জুনে ভারতে আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ১৩ শতাংশের বেশি। জুলাই-সেপ্টেম্বরে তা কমে হয় ৬.৩%। অক্টোবর-ডিসেম্বরে আরও কম, ৪.৪%। কেন্দ্রের দাবি ছিল, আগের অর্থবর্ষের চড়া বৃদ্ধির তুলনায় ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকের হার কম দেখাচ্ছে। কিন্তু রাজনের সতর্কবার্তা, নামতে থাকা বৃদ্ধি বিপজ্জনক। বিশেষত জানুয়ারি-মার্চে যেহেতু তা আরও নামতে পারে (৪.২%) বলেছে আরবিআই। ফলে অক্টোবর-ডিসেম্বরের গড় বার্ষিক বৃদ্ধি করোনা-পূর্ব একই সময়ের প্রেক্ষিতে আসলে ৩.৭%। তিনি বলেন চিন্তা আরও বাড়ছে কারণ, বেসরকারি লগ্নিতে খরা, আরবিআই সুদ বাড়াচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতির গতিও আরও শ্লথ হওয়ার আশঙ্কা। পরিকাঠামোয় কেন্দ্র লগ্নি বাড়ালেও, উৎপাদন ক্ষেত্র ঝিমিয়েই। রাজনের প্রশ্ন, বৃদ্ধির চাকায় গতি আনার রসদ কোথাথেকে আসবে?
এ দিকে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান বলছে, মূল্যবৃদ্ধি ধরে গত অর্থবর্ষে দেশবাসীর মাথাপিছু আয় ২০১৪-১৫ সালের ৮৬,৬৪৭ টাকা থেকে দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ১.৭২ লক্ষ কোটি, বৃদ্ধি ৯৯%। মূল্যবৃদ্ধি বাদে তা ৩৫%। তবে এখানেও সিঁদুরে মেঘ জয়তী ঘোষ বা আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এনআইপিএফপি-র প্রাক্তন ডিরেক্টর পিনাকী চক্রবর্তী মতো অর্থনীতিবিদদের বক্তব্যে। তাঁদের মতে, গড় ধরে হিসাব হওয়ার কারণে মাথাপিছু আয় বেশি দেখাচ্ছে। কিন্তু এই বৃদ্ধির হিসাব আর্থিক বৈষম্যের দলিল। কারণ তা সকলের ক্ষেত্রে সমান নয়। রোজগারের নিরিখে উপরের দিকের ১০ শতাংশের আয় বেড়েছে। কিন্তু কাজের বাজারে সদ্য পা রাখাদের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি থমকে।