রাহুল বজাজ
‘নীরবতা’ ভেঙে মোদী জমানায় ‘বোলনে কি আজাদি’-র অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলল শিল্পমহল।
আজ খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে লক্ষ্য করেই শিল্পপতি রাহুল বজাজ প্রশ্ন ছুড়লেন, ‘‘মানুষের মুখ খোলার স্বাধীনতা নেই কেন?’’
দেশের অর্থনীতির দশা বেহাল দেখেও শিল্পপতিদের এই ‘নীরবতা’ নিয়ে এত দিন প্রশ্ন উঠছিল। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ শুক্রবারই বলেছিলেন, দেশের শিল্পমহল আতঙ্কে রয়েছে। আয়কর দফতর, তদন্তকারী সংস্থার ভয়।
তার পরেই আজ মুখ খুললেন শিল্পমহলের প্রথম সারির মুখ রাহুল বজাজ। কার্যত অমিতের দিকেই আঙুল তুলে প্রশ্ন ছুড়লেন, মোদী জমানায় কেন ‘বোলনে কি আজাদি’ নেই! শনিবার মুম্বইয়ে এক অনুষ্ঠানে বজাজ গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘ইউপিএ সরকারের আমলে যে কারও সমালোচনা করা যেত। কিন্তু আপনাদের বিরুদ্ধে বলতে লোকে ভয় পায়।’’ তার আগেই শাহ বর্ণনা করছিলেন, মোদী সরকার দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কী কী কাজ করেছে। বজাজ বলেন, ‘‘আপনারা কাজ করছেন, তা হলে মানুষের মুখ খোলার স্বাধীনতা নেই কেন?’’ শাহ জবাব দেন, ‘‘কারও ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই।’’ কিন্তু তত ক্ষণে স্পষ্ট হয়েই গিয়েছে, মনমোহন শিল্পমহলের যে আতঙ্কের কথা বলেছিলেন, তাতে কোনও ভুল নেই।
দেশে আর্থিক মন্দা কই! পুঁথিগত তত্ত্বকে ঢাল নরেন্দ্র মোদীর সরকারের
আর্থিক বৃদ্ধির হার ৪.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থনীতিবিদরা একে নোট বাতিল ও ত্রুটিপূর্ণ জিএসটি-র ফল বলে দাবি করলেও শিল্পমহল সরাসরি সরকারের দিকে আঙুল তোলেনি। যে সব শিল্পপতি সেপ্টেম্বরে কর্পোরেট কর কমানোর সিদ্ধান্তকে টুইট করে স্বাগত জানিয়েছিলেন, তাঁরাও নীরব ছিলেন। শুধু আর্থিক নীতিই নয়— মোদী জমানায় অসহিষ্ণুতা, গোরক্ষক বাহিনীর বাড়বাড়ন্ত নিয়েও শিল্পমহল চুপ কেন, প্রশ্ন উঠেছিল। বছর তিনেক আগে রতন টাটা অসহিষ্ণুতা নিয়ে সরব হয়েছিলেন। কিন্তু হালে সে ভাবে আর কাউকে মুখ খুলতে দেখা যায়নি।
আমেরিকায় শিল্পমহল ট্রাম্প সরকারের সামাজিক নীতির সমালোচনা করে। কিন্তু এ দেশের চিত্রটি তেমন নয়। শুধু ‘কাফে কফি ডে’র কর্ণধার ভি জি সিদ্ধার্থর অস্বাভাবিক মৃত্যুর আগে তিনি আয়কর দফতরের হেনস্থার অভিযোগ তোলায় কিরণ মজুমদার শ’, টি ভি মোহনদাস পাই কিছুটা সরব হয়েছিলেন।
‘নীরবতা’ মানেই যে সম্মতির লক্ষণ নয়, তা-ও অবশ্য টের পাওয়া যাচ্ছিল। জুলাই মাসেই যেমন আরপিজি এন্টারপ্রাইজের চেয়ারম্যান হর্ষ গোয়েন্কা একটি টুইটে সূক্ষ্ম ভাবে তার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এ দিন এক নেটিজেন তাঁকে টুইটারে লিখেছিলেন, ‘‘একটু মেরুদণ্ড দেখান।’’ হর্ষ তার উত্তরে ওই পুরনো টুইট-টিকেই ফের তুলে ধরেন— যেখানে এক্স-রেতে দেখা যাচ্ছে, শরীরের বাদবাকি হাড় থাকলেও, মেরুদণ্ডের দেখা নেই। সঙ্গে জুড়ে দেন মন্তব্য, ‘‘আজ হাসপাতালে গিয়েছিলাম এক্স-রে করাতে। সেখানে গিয়ে আমার বহু শিল্পপতি বন্ধুর সঙ্গে দেখা হল। তাঁরাও একই কারণে সেখানে গিয়েছিলেন। ডাক্তার বলেন, সকলেরই শিরদাঁড়ায় একই সমস্যা রয়েছে।’’ মোদী জমানায় শিল্পমহলের ভয় নিয়ে আরও এক নেটিজেনের প্রশ্নে হর্ষ জবাব দেন, ‘জিনা ইহাঁ, মরনা ইহাঁ, ইসকে সিবা জানা কাঁহা!’
আজ বজাজ সরাসরি লক্ষ্মণরেখা ভেঙে বলেন, ‘‘আমি এখানে প্রশংসা করতে আসিনি। আপনার হয়তো পছন্দ হবে না, কিন্তু আমার নাম রেখেছিলেন জওহরলাল নেহরু।’’ নাথুরাম গডসেকে নিয়ে প্রজ্ঞা ঠাকুরের মন্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘মহাত্মা গাঁধীর খুনি যে এক জন সন্ত্রাসবাদী, তা নিয়ে কি কোনও সন্দেহ রয়েছে?’’ শাহ জবাবে বলেন, ‘‘প্রজ্ঞার মন্তব্যের আমরা নিন্দা করি।’’ তাঁর দাবি, ভিড় জমিয়ে পিটিয়ে মারা আগেও হত, এখনও হয়। এ নিয়ে হইচই এখন হচ্ছে। মুম্বইয়ের অনুষ্ঠানে শাহ ছাড়াও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল হাজির ছিলেন। তার পরে হর্ষ আবার টুইট করেন, মন্ত্রীরা সাহসী পদক্ষেপের কথা বললেও কোনও প্রতিশ্রুতি মেলেনি। তবে তিনি আশায় থাকছেন।