রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। —ফাইল ছবি।
২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে উন্নত অর্থনীতি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে মোদী সরকার। কিন্তু বার্ষিক ৭% জিডিপি বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলেও কি তা সম্ভব? রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন কিন্তু এ ব্যাপারে সন্দিহান। তবে এই হারে অগ্রগতি বজায় থাকলে আগামী দু’তিন বছরের মধ্যে জার্মানি এবং জাপানকে ছাপিয়ে ভারত যে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠতে পারে, সে কথা মেনে নিয়েছেন এই অর্থনীতিবিদ। আজ অর্থমন্ত্রকের রিপোর্টে দাবি, চলতি অর্থবর্ষে দেশের বৃদ্ধির হার হবে ৬.৭%-৭%।
আজ সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাজন জানান, গত ১০ বছরে ভারতে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের অধীনে উৎপাদন ক্ষেত্রে উন্নতি করার সদিচ্ছা কেন্দ্রের আছে। কিন্তু তার অভিমুখ যথাযথ হওয়া প্রয়োজন। যাতে কর্মসংস্থানও বাড়ানো যায়। প্রসঙ্গত, উৎপাদন ক্ষেত্রের ‘ব্যর্থতা’ ঘিরে কেন্দ্রের উদ্দেশে আক্রমণ শানিয়ে চলেছে বিরোধীরা।
এক প্রশ্নের উত্তরে রাজন বলেন, ‘‘আমরা যদি ৭% হারে এগোতে পারি, তা হলে দু’তিন বছরের মধ্যে জার্মানি এবং জাপানকে পিছনে ফেলতে পারব। এটা অসম্ভব কিছু নয়। এটা হবেই।’’ এখন ভারতীয় অর্থনীতির সম্ভাব্য আয়তন ৩.৭ লক্ষ কোটি ডলার। জার্মানির ৪.৫ লক্ষ কোটি এবং জাপানের ৪.২ লক্ষ কোটি। কিন্তু রাজন চিন্তিত উন্নত অর্থনীতির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে। এ প্রসঙ্গে একটি হিসাব দিয়েছেন তিনি। রাজন বলছেন, ‘‘ধরা যাক এখনকার মাপকাঠিতে উন্নত অর্থনীতি হতে গেলে মাথাপিছু জিডিপি ১৫,০০০ ডলার হতে হবে। এ বার বছরে ৭% আর্থিক বৃদ্ধি ধরে নিয়ে হিসাব কষলে পরিষ্কার বোঝা যাবে, এই অগ্রগতি যথেষ্ট নয়। তার জন্য আরও উন্নতি দরকার।’’
অর্থনীতির চাকায় আরও গতি আনতে গেলে যে সংস্কার প্রয়োজন, তা কি শরিকনির্ভর মোদী সরকার বাধাহীন ভাবে করতে পারবে? রাজন অবশ্য মনে করেন, জোট সরকারের পক্ষে তা অসম্ভব নয়। তাঁর মতে, ভারতে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে সংস্কারমুখী ছিল পি ভি নরসিংহ রাওয়ের সরকার। তাদের নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা ছিল না। মোদী সরকারকে রাজনের পরামর্শ, অর্থনীতির বাধাগুলিকে দূর করতে হলে সমালোচকদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। কেউ সমালোচনা করলেই ‘কায়েমি স্বার্থ রয়েছে’ বলে দাগিয়ে দিলে সেই উদ্দেশ্য সাধন হবে না।