রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। —ফাইল চিত্র।
কোন প্রকল্প সামাজিক আর কোনটা খয়রাতি, তা নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে। এগুলিকে স্পষ্ট ভাবে চিহ্নিত করার জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন এবং সর্বদল বৈঠক ডাকার পরামর্শ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এক সাক্ষাৎকারে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজনের স্পষ্ট বক্তব্য, দরিদ্র মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নগদ পৌঁছে দেওয়ার মতো প্রকল্পের ইতিবাচক দিক অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু সে ক্ষেত্রে খরচের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এমন কোনও প্রকল্প হাতে নেওয়া উচিত নয়, যা রাজ্যের রাজকোষকে ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিতে পারে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো ক্ষেত্রগুলি চলে যায় পিছনের সারিতে। শনিবার এক অনুষ্ঠানে রাজন জানিয়েছেন, আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের উপরে না উঠলে ২০৪৭ সালে ভারত নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ হিসেবেই থেকে যাবে। উল্লেখ্য, ওই সময়ের মধ্যে ভারতকে উন্নত দেশে পরিণত করতে চায় সরকার।
গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্প চালু করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্কের সীমা নেই। আবার ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কৃষকদের বছরে চার কিস্তিতে ৬০০০ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল মোদী সরকার। সাম্প্রতিকতম বিধানসভা নির্বাচনের আগে মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার মহিলাদের বছরে ১৫,০০০ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। যে প্রকল্প মমতার সরকারের থেকে ‘টোকা’ বলে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না তৃণমূল। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক স্তরে বিতর্ক বেড়েই চলেছে।
রাজনের বক্তব্য, নগদের সুবিধা অনেক সময়ে হতদরিদ্র মানুষের সামনে অগ্রগতির রাস্তা খুলে দেয়। তাঁরা সন্তানের মুখে পুষ্টিকর খাবার তুলে দিতে পারেন। চেষ্টা করেন উন্নততর শিক্ষাব্যবস্থার আঙিনায় পাঠাতে। শীর্ষ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নরের কথায়, ‘‘...এগুলি সবই প্রকল্পের ইতিবাচক দিক। দরিদ্র পরিবারগুলি এই টাকা নিজেদের প্রয়োজনে খরচ করতে পারে।’’ তবে একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘কিন্তু এই প্রকল্প যখন নির্দিষ্ট কোনও শ্রেণির কল্যাণে হয় না এবং কে কত বেশি দিতে পারে সেই প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়, সমস্যা হয় তখনই।’’ এই প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করিয়ে দিচ্ছে, সামাজিক প্রকল্পগুলির সুবিধা শুধু দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে, নাকি যাঁদের প্রয়োজন নেই তাঁদের জন্যও সরকার ‘খয়রাতি’ করে চলেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
ঠিক এই প্রেক্ষিতেই সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে পুরনো পেনশনের কথা। হিমাচলপ্রদেশ, পঞ্জাব-সহ কয়েকটি বিরোধীশাসিত রাজ্য নতুন পেনশন ব্যবস্থা থেকে ফের পুরনো পেনশন ব্যবস্থায় ফিরে এসেছে। রাজনের বক্তব্য, ‘‘এই পরিকল্পনা এমন শ্রেণির জন্য যাদের স্বচ্ছলতা রয়েছে।’’ এই প্রসঙ্গে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর থাকার সময়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেছেন রাজন। জানিয়েছেন, তখন নির্বাচনের আগে একের পর এক রাজ্যে কৃষি ঋণ মকুবের প্রতিশ্রুতি চলছে। নির্বাচনের পরে সেই রাজনীতিবিদেরা এসে জানতে চেয়েছেন, ‘‘কী ভাবে করব স্যার?’’
এ দিন এক অনুষ্ঠানে রাজন হিসাব দিয়ে বলেন, এখন দেশের মানুষের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ২৫০০ ডলারের সামান্য নীচে। বছরে ৬% করে বৃদ্ধি হলে ২০৪৭ সালে তা ১০,০০০ ডলারে পৌঁছতে পারে। ফলে বৃদ্ধির গতি বাড়াতে হবে।