—প্রতীকী চিত্র।
যা ভাবা হয়েছিল, হলও তা-ই। ক্রেতা-বিক্রেতাদের কপালে ভাঁজ আরও গভীর করে ডিসেম্বরের শুরুতে করা রেকর্ড মাসের শেষে এসেই ভেঙে ফেলল সোনার দাম।
বৃহস্পতিবার কলকাতায় প্রতি ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারাট খুচরো পাকা সোনার দাম আগের দিনের থেকে ৩৫০ টাকা বেড়ে ৬৪,৩৫০ টাকায় পৌঁছে গড়েছে নতুন নজির। পাকা সোনার বাটও ছাড়িয়েছে ৬৪ হাজারের সীমা (৬৪,০৫০ টাকা)। আর হলমার্ক সোনার গয়না এই প্রথম পৌঁছেছে ৬১,২০০ টাকায়। সব দরই জিএসটি যোগ করলে আরও অনেকটা বেশি। এর আগে চলতি মাসের ২ তারিখে খুচরো পাকা সোনার দাম উঠেছিল কর বাদে ৬৪,২০০ টাকায়। এত দিন সেটাই ছিল রেকর্ড। তার পর থেকে বরং দাম বেশ কিছুটা নেমেছিল।
স্বর্ণ শিল্প মহলের মতে, বিশ্ব জুড়ে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা বহাল থাকা এবং ফের দেশে মূল্যবৃদ্ধি মাথাচাড়া দেওয়া সোনার দরকে ঠেলে তুলেছে। এমনিতে যে কোনও দোলাচলেই লগ্নির নিরাপদ গন্তব্য হিসেবে প্রাধান্য পায় সোনা। লগ্নিকারীদের ধারণা, আগামী দিনে তার দাম আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। যে কারণে এতে টাকা ঢালছেন তাঁরা।
ভারতে এমনিতে পৌষ মাসে বিয়ে হয় না বললেই চলে। ফলে এই সময়ে বিক্রিতে ভাটা পড়ে। তার উপরে দাম এতটা বাড়ায় গয়নার বাজার ঝিমোচ্ছে। পিসি চন্দ্র গোষ্ঠীর এমডি উদয় চন্দ্র বলছেন, ‘‘বিক্রি আগের থেকে অনেকটাই কমেছে। এখন দর কমার অপেক্ষায় সকলে।’’ ছোটগুলির ক্ষেত্রে চাহিদা তলানিতে বলে জানাচ্ছেন হলদিয়ার গয়না বিক্রেতা মধুসূদন কুইলা। একই মত কলকাতার গরানহাটার পাইকারি গয়না ব্যবসায়ী চিত্তরঞ্জন পাঁজার। তিনি বলেন, “দাম এতটাই বেড়েছে যে, খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ গয়না কিনছেন না।’’ নদিয়ার পায়রাডাঙার ছোট দোকানের মালিক রঞ্জিত রায় বলছেন, “প্রয়োজনীয় সব জিনিসের দামই অনেকটা বাড়ায় তা কিনতেই মানুষ হিমশিম খাচ্ছেন। গয়না কেনার কথা মাথাতেই নেই। ফলে দাম বাড়তে থাকলে টিকে থাকাই কঠিন হবে।’’
এ দিকে সোনার দর বাড়ায় মার খেতে শুরু করেছে গয়না রফতানি। জেম অ্যান্ড জুয়েলারি প্রোমোশন কাউন্সিলের পূর্বাঞ্চলের চেয়ারম্যান পঙ্কজ পারেখ জানান, “চলতি অর্থবর্ষে পরিমাপের দিক দিয়ে গয়না রফতানি প্রায় ১৫% কমেছে। তবে সোনার দাম বৃদ্ধি আয়কে ততটা নামতে দেয়নি। ফলে নিট হিসাবে রফতানি কমেছে ৮%। আগামী দিনে দর কমার আশায় অনেকেই বরাত পিছোচ্ছে।’’
এই পরিস্থিতিতে গয়না ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা সকলেই অপেক্ষা করছেন মাঘ মাস আসার জন্য। কারণ, তখন থেকে ফের শুরু হবে বিয়ের মরসুম।