ফাইল চিত্র।
জিনিসপত্রের দাম কমেছে বলে কেন্দ্র দাবি করছেন ঠিকই। কিন্তু আমজনতা বাজারে গিয়ে তা কতটা টের পাচ্ছেন, সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ঠিক সেই কথাই উঠে এল রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের বুলেটিনে। যেখানে শীর্ষ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর মাইকেল দেবব্রত পাত্র-সহ বাকিদের লেখায় ধরা পড়ল মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগের ছবি। সেখানে বলা হয়েছে, গত জুন থেকে আনাজ বাদে অন্যান্য জিনিসের খুচরো মূল্যবৃদ্ধি ঘোরাফেরা করছে ৫.৮-৬.৪ শতাংশের মধ্যে। যা রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের লক্ষ্যমাত্রার ঊর্ধ্বসীমার কাছাকাছি। তবে শীর্ষ ব্যাঙ্কের দাবি, এই মত লেখকদের নিজস্ব, আরবিআইয়ের নয়।
নিজেদের ঋণনীতি স্থির করার সময়ে বাজারে খুচরো মূল্যবৃদ্ধিকেই গুরুত্ব দেয় শীর্ষ ব্যাঙ্ক। গত কয়েক মাস ধরেই যা ঊর্ধ্বমুখী। নিবন্ধের লেখকদের মতে, গত কয়েক মাসে কাঁচামালের দামও বেশ কয়েক বছরের মধ্যে সর্বাধিক। সঙ্গে বাড়ছে বিশ্ব বাজারে তেলের দরও। এই পরিস্থিতিতে চড়া কাঁচামালের কারণে জিনিসের দাম বাড়লে মূল্যবৃদ্ধি হবে। আবার তা করা না-হলে সংস্থাগুলির মুনাফায় টান পড়বে, ধাক্কা খাবে অর্থনীতি। তাঁদের মতে, জুনে গিয়ে মূল্যবৃদ্ধি মাথা নামাতে পারে। কিন্তু গত বছরের চড়া ভিতের উপরে দাঁড়িয়ে সেই হারও খুব কম হবে
না বলে সতর্ক করেছেন তাঁরা। বলেছেন, বন্ডের ইল্ড কমাতেও যথেষ্ট ব্যবস্থা নিচ্ছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক।
এ দিকে, দেশে গৃহস্থের সঞ্চয় যে গত কয়েক মাসে কমেছে, সেটাও জানিয়েছে এই বুলেটিন। সেখানে বলা হয়েছে, অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে লকডাউন চলার সময়ে মানুষ যত বেশি সঞ্চয় করেছিলেন (জিডিপির ২১%), তার পরের তিন মাসে তা কমে এসেছে অনেকটাই।
লেখকদের বক্তব্য, সাধারণত, আর্থিক মন্দা বা অর্থনীতি নিয়ে দুশ্চিন্তার সময়ে মানুষের মধ্যে বাজে খরচের প্রবণতা কমে। বরং ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে মন দেন তাঁরা। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ২০০৮ সালের বিশ্ব মন্দার সময়ে। লকডাউনে সেটাই দেখা গিয়েছে। শুধু যতটুকু না-করলেই নয়, ততটুকুই খরচ করেছিলেন সাধারণ মানুষ। যে কারণে বেশি সঞ্চয় হয়েছিল। কিন্তু তার পরে আর্থিক কর্মকাণ্ড যত বেশি শুরু হয়েছে, তত বেশি করে খরচ করতে আরম্ভ করেছেন তাঁরা। ফলে কমেছে সঞ্চয়। জুলাই-সেপ্টেম্বরে সেই হার নেমেছে জিডিপির ১০.৪ শতাংশে। তার পরের তিন মাসে আরও কমে থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে ওই নিবন্ধ।
একই সঙ্গে খরচ বাড়ায় জিডিপির সাপেক্ষে গৃহস্থের ঋণের অঙ্কও প্রথম ত্রৈমাসিকের ৩৫.৪% থেকে বেড়ে জুলাই-সেপ্টেম্বরে হয়েছে ৩৭.১%।
অর্থবর্ষে বদল: এত দিন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের অর্থবর্ষ হত প্রতি বছর জুলাই থেকে পরের বছর জুন পর্যন্ত। এ বার বদল ঘটতে চলেছে সেই পরম্পরায়। স্থির হয়েছে, সাধারণ অর্থবর্ষের মতো আগামী এপ্রিল থেকেই শীর্ষ ব্যাঙ্কের আর্থিক বছর (২০২১-২২) শুরু হবে। চলবে পরের মার্চ পর্যন্ত। শুক্রবার শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের নেতৃত্বে ভিডিয়ো কনফারেন্সে আরবিআইয়ের কেন্দ্রীয় পর্ষদের বৈঠকে আগামী অর্থবর্ষের বাজেটে সায় দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি এবং চ্যালেঞ্জ নিয়েও আলোচনা হয়েছে সেখানে।