প্রতীকী চিত্র।
অর্থনীতির হাল ফেরাতে হলে গরিব মানুষের হাতে টাকা পৌঁছতে হবে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আলোচনাসভায় যোগ দিতে এসে এ কথা বললেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) অর্থনীতির অধ্যাপক জয়তী ঘোষ। চাহিদার অভাবে বাজারের ঝিমিয়ে থাকা অবস্থার জন্য সমালোচনা করলেন কেন্দ্রের বিভিন্ন নীতির। সেই সঙ্গে জানালেন, এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে একশো দিনের প্রকল্পকে গুরুত্ব দেওয়া ও সহায়ক মূল্যে ফসল কেনার মতো পদক্ষেপ করা জরুরি।
বৃহস্পতিবার বেকারত্ব সমস্যা নিয়ে এক সভায় জয়তীর দাবি, ‘‘২০১২ সালে লগ্নি কমলেও, চাকরির বাজার খোলা ছিল। ২০১৭ থেকে লগ্নির পরিস্থিতি কেমন, তা টের পাওয়া যাচ্ছে। চাকরির বাজারও নেই।’’ তাঁর নিদান, চাহিদা তৈরি করতে খরচ বাড়াতে হবে। গরিব মানুষের হাতে টাকা দিতে হবে। তারই প্রভাব অর্থনীতিতে পড়বে।
কৃষির বেহাল দশা প্রসঙ্গে জয়তী বলেন, ‘‘সঙ্কট আগেই শুরু হয়েছিল। মাটির গুণাগুণ কমছে, আবহাওয়া বদলাচ্ছে। সমবায় ঋণ কমছে, মহাজনের কাছে চড়া সুদে টাকা নিতে হচ্ছে। নোটবন্দি ও জিএসটি-ও ঝামেলা বাড়িয়েছে। খরচ বাড়লেও লাভ আসেনি।’’ তাঁর মতে, সহায়ক মূল্য দিতে হবে চাষিদের। কিন্তু কেন্দ্রের অনুদান ঠিক মতো না মেলায় তাতেও ধাক্কা লাগছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। জয়তীর কথায়, ‘‘ঠিক সময়ে ফসল কিনতে মাঠে না-নামায় বেশি চাষির কাছে পৌঁছনো যায় না। আবার এক-একটি গ্রামে তুলনামূলক অনেক কম সময় ফসল কেনা হয়। এ জন্য কেন্দ্রের নীতিই দায়ী।’’
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রায়ই আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একমত এই অর্থনীতির শিক্ষকও। জয়তীর দাবি, ‘‘রাজ্যগুলিকে প্রাপ্য টাকার অন্তত ২০% কম দিচ্ছে কেন্দ্র। বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলি অনুদান ভাল পেলেও, অ-বিজেপি সরকার কম পাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও কেরল-মহারাষ্ট্র সে কথা বলছে।’’ রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘জয়তীদেবী যথার্থই বলেছেন। এ বছর ৪০০০ কোটি টাকার ধান কিনেছি। ব্যাঙ্ক-ঋণ নিয়ে সহায়ক মূল্যে ধান কিনতে হচ্ছে। টাকা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রকে।’’
জয়তী এ দিন বলেন, ‘‘বড়-বড় সংস্থাকে কর ছাড় না-দিয়ে, দেড় লক্ষ কোটি টাকা সামাজিক ক্ষেত্রে আয় বৃদ্ধিতে খরচ করলে কার্যকর হত।’’ বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার অবশ্য দাবি, ‘‘জয়তী ঘোষ নিরপেক্ষ নন। বিরোধীদের যা অভিযোগ, সে সবই বলছেন উনি।’’