প্রতীকী চিত্র।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিভিন্ন সময় দাবি করেছেন, গত এপ্রিলে ভারতে আছড়ে পড়া কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ তেমন কাহিল করতে পারেনি অর্থনীতিকে। অর্থ মন্ত্রকের মাসিক রিপোর্টেও বলা হয়েছিল, দ্বিতীয় কামড় সয়ে আর্থিক কর্মকাণ্ড দ্রুত গা-ঝাড়া দিয়ে উঠেছে, তাই মে-জুন থেকেই প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নতির লক্ষণ স্পষ্ট। তবে সোমবার শ্রম মন্ত্রী ভূপেন্দর যাদব গত জুলাই-সেপ্টেম্বরে কর্মসংস্থানের যে হিসাব পেশ করেছেন, তার সঙ্গে ওই সব দাবি বিশেষ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলেই মনে করছে বিভিন্ন মহল। কারণ কেন্দ্রের ত্রৈমাসিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সে সময় সারা দেশে নির্মাণ, উৎপাদন, তথ্যপ্রযুক্তি-সহ ন’টি সংগঠিত ক্ষেত্রে (কৃষি বাদে) কাজে জড়িত ছিলেন ৩.১০ কোটি মানুষ। আগের তিন মাসের ৩.০৮ কোটি থেকে মাত্র ২ লক্ষ বেশি মাত্র ০.৬%।
যদিও সরকারি পক্ষের একাংশের ইঙ্গিত, এই তথ্য অর্থনীতির উন্নতিতে গতি আসার প্রমাণ। দ্বিতীয় ঝাপটার পরে রাজ্যগুলি লকডাউন-বিধিনিষেধ শিথিল করতেই আর্থিক কর্মকাণ্ড ছন্দে ফিরতে শুরু করেছিল। তার উপর মেয়েরা যে বেশি কাজে পেয়েছেন, সেটাও উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্ট মহলের পাল্টা— এক, এর আগে ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষের আর্থিক সুমারিতে ওই ন’টি ক্ষেত্রে ২.৩৭ কোটি জন কাজে ছিলেন। অর্থাৎ, সাত বছরে কাজ বেড়েছে সংখ্যার নিরিখে মাত্র ৭৩ লক্ষ। দুই, উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই-র পরিসংখ্যানে সম্প্রতি প্রকাশ, ডিসেম্বরে দেশে বেকারত্বের হার বেড়ে হয়েছে ৭.৯%। যা গত চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। যে ভাবে দাবানলের মতো ছড়াচ্ছে অতিমারির তৃতীয় ঢেউ, তাতে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পথ আবার আটকে গেলে বেকারত্বের বর্ধিত হার কাজের বাজারকে আরও বেহাল করবে। একাংশের এটাও যুক্তি লিঙ্গ হোক বা আর্থিক, করোনাকালে বৈষম্য বৃদ্ধির ক্ষত বার বার দেখাচ্ছে আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা সংস্থাগুলি।
অতিমারির আগে কিংবা পরে, কর্মসংস্থান নিয়ে মোদী সরকারকে নাগাড়ে বিঁধে আসছে বিরোধীরা। একাংশের প্রশ্ন, এটা ঠিক বিধিনিষেধ ওঠায় ২ লক্ষ কাজ বেড়েছিল জুলাই-সেপ্টেম্বরে। কিন্তু এটাকে অর্থনীতিতে গতি আসা বলা যায় কি? কোন অর্থে? বিশেষ করে ক্ষমতায় আসার আগে যেখানে বছরে দু’কোটি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তৎকালীন এনডিএ-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। বিরোধীদের বরাবরের অভিযোগ, মোদী সরকারের জমানায় কাজের বাজার তো চাঙ্গা হয়ইনি, উল্টে আরও ঝিমিয়ে পড়েছে।
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে এনএসও-র ফাঁস হওয়া রিপোর্ট বলেছিল, ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে দেশে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৬.১%। যা সাড়ে চার দশকের সর্বোচ্চ। শুরুতে না-মানলেও ভোট জেতার পরে কেন্দ্র রিপোর্টটি সরকারি ভাবে স্বীকার করে নেয়। আর এখন তো বেকারত্বের হার আরও বেশি। এই কারণেই ২ লক্ষ কাজ বাড়ায় সাধুবাদ আশা করছে সরকার, কটাক্ষ সমালোচকদের।