কলকাতার বাসিন্দাদের একাংশকে আরও কিছুটা ধাক্কা দিয়ে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বাড়ল। —প্রতীকী চিত্র।
এখনও খাবার-সহ বিভিন্ন জিনিসের চড়া দামে হাত পুড়ছে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের খরচে সুরাহার প্রত্যাশায় জল ঢেলে শনিবার রাতে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি জানিয়েছিল, ডিসেম্বরেও গৃহস্থের রান্নার গ্যাসের দাম কমছে না। আর রবিবার মূলত কলকাতার বাসিন্দাদের একাংশকে আরও কিছুটা ধাক্কা দিয়ে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বাড়াল তারা। আইওসি-র পাম্পে দু’টি পরিবহণ জ্বালানির লিটারই ৬ পয়সা করে বেড়েছে। ফলে পেট্রল হয়েছে ১০৫.০১ টাকা আর ডিজ়েল ৯১.৮২।
প্রশ্ন উঠেছে, দেশ জুড়ে যখন দাম বাড়েনি, তখন কলকাতাবাসীর উপরে বাড়তি বোঝা কেন? বিশেষত এমন এক সময়ে, যখন খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির ফের চড়তে থাকা হার থেকে মুক্তি পেতে এবং খাদ্যপণ্যের আগুন দরে জল ঢালতে অবিলম্বে ডিজ়েলের দাম কমানোর দাবি জোরালো হচ্ছে। তার উপর এ নিয়ে তেল সংস্থার তরফে বা কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। তবে সূত্রের খবর, এই দাম বৃদ্ধি পুরোপুরি স্থানীয় কারণে। এর সঙ্গে বিশ্ব বাজারের দর বা তেল সংস্থার লাভ-ক্ষতির যোগ নেই। জানানো হয়েছে, রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে পাম্পে বিক্রীত তেলের দামের ফারাক নিয়ে বহু দিন ধরেই প্রশ্ন উঠছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, অন্যান্য রাজ্যেও। তাই গত কয়েক মাস ধরে তেল মন্ত্রকের নির্দেশ মেনে বিক্রেতা সংস্থাগুলি দেশের বিভিন্ন শহরে বিচ্ছিন্ন ভাবে স্থানীয় স্তরে সেই ফারাক কমানোর চেষ্টা করছে। ফলে কিছু কিছু জায়গায় কয়েক পয়সা করে বাড়ছে দাম। শুধু কলকাতা নয়, রবিবার থেকে মুম্বই এবং রাঁচিতেও দাম বেড়েছে। চেন্নাইতে ১০ পয়সা কমেছে পেট্রল। বাকি বড় শহরগুলিতে দাম মোটের উপর স্থির।
সূত্রের দাবি, মূলত বিক্রেতাদের কমিশন বৃদ্ধি এবং গাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত কিছু হিসেবের (অ্যাডজাস্টমেন্টে) কারণেই দাম বৃদ্ধি। বর্তমানে কলকাতা ও তার পাশ্ববর্তী এলাকার অধিকাংশ পাম্পেই পেট্রল ১০৫ টাকা ও ডিজ়েল ৯১.৮১ টাকার আশেপাশে। সে দিক থেকে এই বৃদ্ধি খুচরো দামে বিরাট কিছু বদল আনবে না বলে বার্তা ওই সুত্রের। যদিও অন্য অংশের বক্তব্য, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম সস্তা হওয়ায় জ্বালানির দর যখন কমার কথা, তখন এই বৃদ্ধি হতাশাজনক। এতে আখেরে কিছু মানুষের বোঝা বাড়বেই। অশোধিত তেল আমদানির খরচ কমার সুবিধা দেশে তেলের দাম কমিয়ে মানুষের ঘরে পৌঁছনো হল না কেন, সেই প্রশ্নও তুলছেন একাংশ।
ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি প্রসেনজিৎ সেন রবিবার বলেন, “আগেই আমরা জানিয়েছিলাম বিভিন্ন পাম্পের মধ্যে লিটার প্রতি পেট্রল-ডিজ়েলের দামে একটা ৪-৬ পয়সার পার্থক্য থেকে যাচ্ছিল। সেটা হচ্ছিল মূলত ডিপো থেকে পাম্পে তেল পরিবহণের খরচের কারণে। আশা করছি, এই দাম বদলের ফলে কলকাতা ও শহরতলির পাম্পে দামের অসাম্য থাকবে না।” এই নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে বিক্রেতারা সংস্থাগুলিকে বারবার জানিয়েছিল। তার পরেই এই পরিবর্তন, দাবি প্রসেনজিতের। তিনি জানান, অক্টোবরের প্রথম দিক থেকে হাওড়া, কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাধিক পাম্পে পেট্রল ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। এই বৃদ্ধির সঙ্গে সেই অসাম্যও ঘুচল। তবে ইন্ডিয়ান অয়েল ডিলার্স ফোরামের সভাপতি জন মুখোপাধ্যায় দাম বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে পারেননি।
প্রসেনজিৎ অবশ্য এটাও জানান, পেট্রল ও ডিজ়েলের দাম গোটা রাজ্য জুড়ে অভিন্ন করার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট মহল থেকে। ধীরে ধীরে বিভিন্ন অঞ্চলে সামান্য দাম কমিয়ে-বাড়িয়ে মোটামুটি এক দাম গোটা রাজ্যেই চালু করার পরিকল্পনা। কারণ, বর্তমানে ডিপো থেকে দুরত্বের নিরিখে হলদিয়া, কলকাতা, বর্ধমান, বাঁকুড়া, শিলিগুড়ি কিংবা দার্জিলিং-এ পেট্রোপণ্যের দাম ভিন্ন। এতে সমস্যা হয় বলেই দাম এক রাখার উদ্যোগ। তবে বিভিন্ন জায়গায় পরিবহণের খরচ ভিন্ন হলে দাম কী করে অভিন্ন হবে, সেই প্রশ্নও থাকছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।