প্রতীকী ছবি।
মানুষের প্রবল আশা ছিল, জুলাই থেকে ডাকঘর ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পের সুদ বাড়বে। চলতি পরিস্থিতিতে সেই প্রত্যাশা অমূলকও ছিল না। কিন্তু কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত হতাশ করল তাঁদের!
এক দিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের আকাশছোঁয়া দাম এবং অন্য দিকে ঋণপত্রের ইল্ড ৭.৫ শতাংশে পৌঁছে যাওয়ায় আমজনতা ধরেই নিয়েছিলেন ১ জুলাই থেকে এনএসসি, পিপিএফ, সিনিয়র সিটিজেন্স সেভিংস স্কিম ইত্যাদি প্রকল্পগুলিতে সুদ বাড়ছেই। কিন্তু এ দফাতেও সরকার সুদ অপরিবর্তিত রাখার ব্যাপারে অনড় থেকেছে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি হতাশ হয়েছেন প্রবীণ নাগরিক তথা সুদ নির্ভর মানুষেরা। অভিযোগ, করোনাকালে এঁদের আর্থিক সমস্যার সমাধানে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। উল্টে ট্রেন ভ্রমণের ছাড় তুলে দেওয়া হয়েছে। শিল্পকে উৎসাহ দিতে বছর কয়েক আগে কোম্পানি কর কমানো হলেও, গত দু’বছরে সাধারণ মানুষ এবং প্রবীণ নাগরিকদের করের ব্যাপারে নতুন কোনও সুবিধা দেওয়া হয়নি। এঁদের অনেকেই চাইছেন ট্রেনের টিকিটে ছাড় অবিলম্বে ফিরিয়ে আনা হোক।
গত ৩০ জুন চলতি অর্থবর্ষের (২০২২-২৩) প্রথম তিন মাস শেষ হয়েছে। কয়েক দিন পরেই শুরু হবে শিল্প সংস্থাগুলির আর্থিক ফলাফল প্রকাশের পালা। জুনের কিছু আর্থিক পরিসংখ্যান ইতিমধ্যেই হাতে এসেছে, যেগুলি মোটের উপরে সন্তোষজনক। গত মাসে জিএসটি বাবদ রাজস্ব আদায় হয়েছে ১,৪৪,৬১৬ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৫.৮% বেশি। মে মাসে ওই খাতে ১,৪০,৮৮৫ কোটি টাকা আদায় হয়েছিল। জুনে গাড়ি বিক্রিও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এই শিল্পে নানা সমস্যা থাকা সত্ত্বেও এবং পেট্রল-ডিজ়েলের উঁচু দামকে উপেক্ষা করেও গত মাসে কারখানা থেকে ডিলারদের শোরুমে পাঠানো হয়েছে ৩.২১ লক্ষ যাত্রিগাড়ি। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সাত দিন উৎপাদন বন্ধ রাখায় মারুতি সুজ়ুকির বিক্রি সামান্য কমলেও, অন্যান্য সংস্থার ক্ষেত্রে ভাল বেড়েছে।
মে মাসে দেশের পরিকাঠামো ক্ষেত্রের উৎপাদন বেড়েছে ১৮.১%। ১৩ মাসে সবচেয়ে বেশি। আটটি প্রধান শিল্পের সবক’টিতেই উৎপাদন বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। কয়লা, রাসায়নিক সার ও সিমেন্টে বেড়েছে যথাক্রমে ২৫.১%, ২২.৮% ও ২৬.৩%।
অর্থনীতি থেকে ভাল খবর এলেও শেয়ার বাজার পড়েই চলেছে। একই অবস্থা ডলারের নিরিখে টাকার দামের। শুক্রবার ১১১ পয়েন্ট নেমে সেনসেক্স থিতু হয়েছে ৫২,৯০৮ পয়েন্টে। অন্য দিকে, ৭৯ টাকার গণ্ডি টপকে ডলারের দাম ৭৯.০৪ টাকায় পৌঁছে গিয়েছে। এই দুই পতনেরই অন্যতম প্রধান কারণ বিদেশি লগ্নিকারীদের নাগাড়ে শেয়ার বিক্রি করে সেই মূলধন ডলারে বদলে নিয়ে ভারতের বাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়া। ২০২২ সালের প্রথম ছ’মাসে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ২.১ লক্ষ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। শুধু জুনেই ভারতের বাজারে তারা বিক্রি করেছে ৪৫,০০০ কোটি টাকার শেয়ার। শেয়ার সূচক এতটা নেমে আসায় তার প্রতিফলন পড়েছে মিউচুয়াল ফান্ড শিল্পের উপরেও।
এই অবস্থায় দেশের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত সপ্তাহে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। সেগুলি হল:
পেট্রল এবং বিমানের জ্বালানির (এটিএফ) রফতানির উপর লিটার প্রতি ৬ টাকা রফতানি শুল্ক আরোপ। উদ্দেশ্য দেশে সরবরাহ বাড়াতে এই দুই পণ্যের রফতানি কমানো।
প্রতি লিটার ডিজ়েলের উপর ১৩ টাকা করে রফতানি শুল্ক।
দেশে উৎপাদিত প্রতি টন অশোধিত তেলের উপর বসানো হয়েছে ২৩,২৫০ টাকার অস্বাভাবিক মুনাফা (উইন্ডফল) কর। অর্থাৎ, বিশ্ব বাজারে পণ্যটির দাম বৃদ্ধির ফলে যে অতিরিক্ত লাভ সংস্থাগুলি করছিল তার উপরে কর চাপানো হয়েছে। এই সব সিদ্ধান্তের কারণে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ়-সহ তেল উৎপাদন ও বিপণন সংস্থাগুলির শেয়ার দরের বড় পতন হয়েছে।
আমদানি কমাতে সোনায় এই শুল্ক ১০.৭৫% থেকে বাড়িয়ে ১৫% করা হয়েছে। আশঙ্কা, এর ফলে প্রতি ১০ গ্রাম সোনার দাম বাড়তে পারে ২০০০ টাকা করে। পাশাপাশি, কমতে পারে ধাতুটির চাহিদা। সে ক্ষেত্রে অবশ্য পরের দিকে ফের দাম কমতে পারে।
(মতামত ব্যক্তিগত)