আরও এগোবে সূচক, আশা বাজারের

নতুন বছরে নজর থাকবে বাজেটে

এই মুহূর্তে সূচককে শক্তি জোগাচ্ছে বিদেশি লগ্নি এবং মিউচুয়াল ফান্ড।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৫:০৮
Share:

ছবি: সংগৃহীত

আর্থিক বৃদ্ধি, পণ্যের চাহিদা, উৎপাদন, রফতানি, বেসরকারি লগ্নি— এমন বেশ কয়েকটি মাপকাঠিতেই ঝিমিয়ে রয়েছে দেশের অর্থনীতি। সেই সঙ্গে রয়েছে মূল্যবৃদ্ধির কামড়। অথচ বছর শেষের দু’দিন আগে পর্যন্ত শেয়ার বাজার কিন্তু চাঙ্গাই। দেশের দু’টি প্রধান শেয়ার সূচক সেনসেক্স ও নিফ্‌টি নতুন নজির গড়েছে বারবার। সারা বছরে এখনও পর্যন্ত দুই সূচক বেড়েছে যথাক্রমে ১৫.২৭% এবং ১২.৭৪%।

Advertisement

আপাতদৃষ্টিতে এই উত্থানকে ভাল মনে হলেও, সামগ্রিক ভাবে বাজারের কিন্তু এই হারে উত্থান হয়নি। অনেক মাঝারি ও ছোট শেয়ারকে ভাল রকম পড়তে দেখা গিয়েছে এ বছর। এই কারণে বেশ কিছু মিড ক্যাপ, স্মল ক্যাপ, মাল্টি ক্যাপ ও ইএলএসএস ফান্ডের ন্যাভ বেড়েছে নামমাত্র। বিভিন্ন কারণে বেশ কয়েকটি নামী কোম্পানি তলিয়ে গিয়েছে। যা বাড়িয়েছে ব্যাঙ্কগুলির অনাদায়ি ঋণের বোঝা। বহু লগ্নিকারীকে বিপাকে ফেলে গত ১৫ মাসে ডুবেছে দু’টি ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফসি)। অর্থাৎ, বাজারের সামগ্রিক অবস্থার প্রতিফলন কিন্তু শেয়ার সূচক দু’টিতে দেখা যাচ্ছে না।

আসলে এই মুহূর্তে সূচককে শক্তি জোগাচ্ছে বিদেশি লগ্নি এবং মিউচুয়াল ফান্ড। তথ্য বলছে, গত ১১ মাসে এসআইপি পথে ফান্ডে লগ্নি এসেছে ৯০,০৯৪ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১.৭২% বেশি। চলতি অর্থবর্ষে প্রতি মাসে গড়ে ৯.৫ লক্ষ এসআইপি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে নতুন বছরে নজর থাকবে কেন্দ্রীয় বাজেটের দিকে। বাজারের অনুমান, চাহিদা এবং বিনিয়োগে প্রাণ ফেরাতে এই বাজেটকে হাতিয়ার করবে মোদী সরকার। থাকতে পারে বেশ কিছু দাওয়াই। সাধারণ মানুষের আশা, কমানো হতে পারে ব্যক্তিগত আয়করের হার। করা হতে পারে তার স্তরের পুনর্বিন্যাসও। সে ক্ষেত্রে বাজারের আশা, বাজেটের হাত ধরে আগামী বছর সূচক আরও এগোবে। অনেকের মতে, ২০২০ সালে প্রধান দুই সূচক বাড়তে পারে ৫% থেকে ১৫%। আবার অনেকের মতে, চিন-মার্কিন বাণিজ্য-চুক্তি সই হলে বিশ্ব বাজার চাঙ্গা হবে। যা মদত জোগাবে ভারতীয় বাজারকেও।

তবে প্রধান দুই সূচক বাড়লেই যে পরিস্থিতি ভাল হয়ে যাবে, তা কিন্তু নয়। সামগ্রিক ভাবে বাজারকে উঠতে গেলে পণ্যের চাহিদা এবং অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরাতে হবে। বাড়তে হবে মাঝারি এবং ছোট শেয়ারগুলিকেও। ২০২০ সালে বাজারের বিশেষ নজর থাকবে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ারের উপরেও। চোখ থাকবে টেলিকম সংস্থার শেয়ারের দিকেও।

এ বছর ভাল রকম ঝিমিয়ে ছিল নতুন ইসুর বাজার। তবে সিএসবি ব্যাঙ্ক, আইআরসিটিসি, ইন্ডিয়ামার্ট ইন্টারমেশের মতো কয়েকটি ইসুতে বড় লাভের সন্ধান পেয়েছেন লগ্নিকারীরা। এই বছরই প্রথম বন্ড ইটিএফ (ভারত বন্ড ইটিএফ) চালু করেছে কেন্দ্র। বাজার সামগ্রিক ভাবে চাঙ্গা হলে ও শিল্পে প্রাণ ফেরার লক্ষণ দেখা দিলে ২০২০ সালে আবার মাথা তুলতে পারে পারে নতুন ইসুর বাজার।

২০ ডিসেম্বর শেষ হওয়া সপ্তাহে সর্বকালীন রেকর্ড গড়েছে ভারতের বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার। রফতানি কমা সত্ত্বেও এটি হয়েছে মূলত টানা বিদেশি লগ্নি এবং আমদানি হ্রাসের কারণে। ভারতের বিদেশি মুদ্রার তহবিল ৪৫.৬ কোটি ডলার বেড়ে পৌঁছেছে ৪৫,৪৯৫ কোটি ডলারে, যা সর্বকালীন রেকর্ড।

নতুন বছরের প্রথম তিন মাসের ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে নতুন সুদের হার ঘোষিত হওয়ার কথা শীঘ্রই। আগের তিন মাসে সুদে কোনও পরিবর্তন আনা হয়নি। এই কারণে পিপিএফ, সিনিয়র সিটিজেন্স সেভিংস স্কিম, এনএসসি ইত্যাদি জনপ্রিয় প্রকল্পে সুদের হার এখন ব্যাঙ্কে প্রচলিত সুদের তুলনায় অনেকটাই বেশি। খাদ্যপণ্যের মূল্য সম্প্রতি অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় এই দফায় ওই সুদ কমানো না-ও হতে পারে বলে অনেকের আশা। ডিসেম্বরে সুদ কমানো থেকে বিরত থেকেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কও।

(মতামত ব্যক্তিগত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement