প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অযোধ্যার রামমন্দিরে রামলালার মূর্তির ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’। এই ঘটনার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাক্ষী থাকার জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অর্ধদিবস ছুটি দিতে বলা হয়েছে ব্যাঙ্ক এবং বিমা সংস্থাগুলিকে। বন্ধ রাখা হয়েছে শেয়ার বাজার। এই কর্মসূচি ধর্মীয় হলেও এর রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক তাৎপর্য কিন্তু সুদূরপ্রসারী হবে বলে মনে করছে বিভিন্ন মহল। রামমন্দির উদ্বোধনে অংশ নিতে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের পাশাপাশি আসছেন দেশের তাবড় শিল্পপতিরা। বাদ যাচ্ছেন না বিনোদন ও ক্রীড়াজগতের প্রথম সারির কলাকুশলীরাও। লক্ষ্য, আজ সমস্ত ক্ষেত্রের নজর যেন থাকে অযোধ্যায়।
ভুললে চলবে না, বিভিন্ন শিল্প ক্ষেত্রের মতো বাজার মহলেরও আজ নজর থাকবে রামমন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। ধর্মীয় ভাবাবেগের পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে রাজনীতি এবং অর্থনীতি সম্পর্কে কী ইঙ্গিত থাকে সে দিকে চোখ-কান থাকবে সকলের। শিল্পপতিদের কে কী বলেন, সে দিকেও সাগ্রহে চেয়ে রয়েছে বিভিন্ন মহল। রামমন্দিরকে কেন্দ্র করে যে শিল্প সরাসরি উপকৃত হবে তা হল হোটেল এবং পর্যটন। এই কর্মসূচির প্রভাব শেয়ার বাজারে কতটা পড়ে, মঙ্গলবার বাজার খুললে তার আঁচ পাওয়া যাবে।
গত সোমবার ৭৫৯ পয়েন্ট উঠে নতুন শিখরে (৭৩,৩২৮) পৌঁছয় সেনসেক্স। গত ১ ডিসেম্বর লেনদেনের শেষে তা ৬৭,৪৮১ অঙ্কে পৌঁছেছিল। অর্থাৎ, মাত্র দেড় মাসে বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সূচকটি বেড়েছে ৫৮৪৭ পয়েন্ট। এত কম সময়ে এত বড় উত্থান হলে পতন এড়ানোও শক্ত। বাস্তবেও দেখা গেল নতুন নজির গড়ার পরদিন থেকে পতনের মুখে পড়তে হল বাজারকে। মঙ্গলবার ১৯৯ পয়েন্টের পরে বুধবার সেনসেক্স খোয়ায় আরও ১৬২৮ অঙ্ক। অথচ, বাজার এতটা নামার ক্ষেত্রে দেশের ভিতরে ও বাইরে তেমন জোরালো কোনও কারণ ছিল না। অল্প সময়ে লম্বা দৌড়ের পরে বাজার সংশোধনের একটা অবকাশ খুঁজছিল। সেই সুযোগ তাকে করে দেয় এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের আর্থিক ফলাফল। গত অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে দেশের বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাঙ্কটির নিট মুনাফা ৩৩% বেড়ে ১৬,৩৭২ কোটি টাকায় পৌঁছলেও এই ফলাফলই বাজারের পতনের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই মুনাফা থেকে করের ব্যবস্থা (ট্যাক্স প্রভিশন) বাবদ ফিরিয়ে নেওয়া ১৫০১ কোটি টাকা বাদ দিলে যে লাভ দাঁড়ায়, তা সম্ভবত বাজারের মনঃপুত হয়নি। এর জেরে ওই ব্যাঙ্কের শেয়ারে ধস নামে। বিপুল শেয়ারমূল্য খোয়াতে হয় তাকে। সব মিলিয়ে এর প্রতিফলন দেখা যায় গোটা শেয়ার বাজারে।
এই ধরনের সংশোধন যে হতে পারে তা অনুমান করা হচ্ছিল বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই। উপযুক্ত কারণ ছাড়া এতটা চড়া বাজার সাধারণ লগ্নিকারীদের জন্য ভাল নয়। বাজার অস্বাভাবিক উচ্চতায় পৌঁছলে সামান্য কারণেই ধস নামতে পারে। আর সংশোধন হলে তা সুযোগ করে দেয় অপেক্ষাকৃত কম দামে ভাল শেয়ার কেনার। ফলে এই ধরনের সংশোধন থেকে সুযোগসন্ধানীরা অনেক সময়েই ফায়দা তোলার চেষ্টা করেন।
এ দিকে, বছরের প্রথম মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই শিল্প সংস্থাগুলির ফল প্রকাশের মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছে। ইনফোসিস, টিসিএস এবং উইপ্রোর পরে গত সপ্তাহে বড় সংস্থাগুলির মধ্যে অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকের ফলাফল নিয়ে হাজির হয়েছে এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ় এবং আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক-সহ কয়েকটি নামী সংস্থা। তাদের ফলাফলের কম-বেশি প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাজারে। রিলায়্যান্সের নিট লাভ ১০.৯% বেড়ে পৌঁছেছে ১৯,৬৪১ কোটি টাকায়। ১৪ কোটি টাকা বেড়ে হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের লাভ স্পর্শ করেছে ২৫১৯ কোটি। আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের মুনাফা বেড়েছে ২৪%। পৌঁছেছে ১০,২৭২ কোটি টাকায়। চলতি সপ্তাহেও বেশ কয়েকটি সংস্থার ফল প্রকাশ হবে। বাজারের চোখ থাকবে সে দিকে।
রামমন্দিরের উদ্বোধনের পরে বাজারের নজর ঘুরবে বাজেটের দিকে। অনুমান, ১ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ হওয়ার দিন কয়েকের মধ্যেই ঘোষণা করা হবে লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ। তবে সেই নির্বাচনে আগামী পাঁচ বছরের জন্য দেশ ফের একটি পোক্ত সরকার পেতে চলেছে ধরে নিয়েই গতি বেড়েছে শেয়ার সূচকের। বিরূপ কোনও হাওয়া না উঠলে বড় মেয়াদে নির্বাচনের তেমন কোনও প্রভাব বাজারে পড়বে না বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট সমস্ত মহল। তা সত্ত্বেও এই সময়ে লগ্নিকারীরা সাধারণত সতর্ক ভাবে পুঁজি ঢালেন। আর দীর্ঘমেয়াদে নতুন সরকারের আর্থিক নীতিই ঠিক করে দেয় বাজার কোন দিকে যাবে।
(মতামত ব্যক্তিগত)