ডেরেক ওব্রায়েন, মনমোহন সিংহ এবং সীতারাম ইয়েচুরি। —ফাইল চিত্র
আর্থিক বৃদ্ধির হার কতটা নামলে তবে আর্থিক মন্দা বলা যাবে? দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধির হার আরও নেমে ৪.৫ শতাংশ ঘোষিত হতেই কটাক্ষ ছুড়ে দিল বিরোধীরা। কংগ্রেস-তৃণমূল-সিপিএম একযোগে সরব হয়েছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিংহ বলছেন, ‘‘গভীর উদ্বেগজনক।’’ সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির বিস্মিত প্রশ্ন, ‘‘এটাও মন্দা নয়!’’ তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের নিশানায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
গত ছ’বছরের মধ্যে সবচেয়ে নীচে নেমে যাওয়ার নজির তৈরি হয়েছিল ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকেই। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে এসে সেটাই নেমে গেল ৫ শতাংশেরও নীচে। ২০১২-১৩ আর্থিক বছরের শেষ ত্রৈমাসিকের পর অর্থনীতির এমন বেহাল দশা আর দেখেনি দেশ। শুক্রবার দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধির হার ৪.৫ শতাংশে নেমে যাওয়ার পরেই কেন্দ্রকে বিঁধতে শুরু করল বিরোধীরা।
ছ’বছর আগে জিডিপি নেমে গিয়েছিল ৪.৩ শতাংশে। সেই সময় দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিংহ। শুক্রবার জিডিপি বৃদ্ধির হার প্রকাশ্যে আসার পর সেই অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিংহ বলেন, ‘‘আমাদের অর্থনীতির অবস্থা গভীর উদ্বেগজনক। তবে আমি বলব, আমাদের সমাজের অবস্থা আরও উদ্বেগজনক।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এটা মেনে নেওয়া যায় না। আশা ছিল দেশের আর্থিক বৃদ্ধি ৮ থেকে ৯ শতাংশে পৌঁছবে। কিন্তু প্রথম ত্রৈমাসিক থেকে সেটা কমে ৪.৫ শতাংশে নেমে যাওয়াটা উদ্বেগের। আর্থিক নীতিতে সামান্য কিছু রদবদল করে এই অবস্থা থেকে পুনরুজ্জীবন সম্ভব নয়।’’
আরও পড়ুন: পতন অব্যাহত, দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার আরও কমে দাঁড়াল ৪.৫ শতাংশে, ছ’বছরে সর্বনিম্ন
প্রথম বার ক্ষমতায় এসে জিডিপি বৃদ্ধির হার দুই অঙ্কে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এমনকি, এ বছর ফের ক্ষমতায় এসে প্রথম সাধারণ বাজেটে ৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনীতির স্বপ্ন দেখিয়েছিল মোদী সরকার। কিন্তু জিডিপি বৃদ্ধির যে হার, তাতে সেই স্বপ্নের থেকে ক্রমে আরও দূরে সরছে। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালার টুইট, ‘‘দেশের জিডিপি অস্বাভাবিক ভাবে ৪.৫ শতাংশে নেমে গিয়েছে। এ তো ভার্চুয়াল ফ্রি ফল। ছ’বছরের মধ্যে এটাই সর্বনিম্ন জিডিপি বৃদ্ধির হার।’’ শব্দের কারিকুরি করে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘কিন্তু বিজেপি কেন উল্লসিত? কারণ ওঁরা যে জিডিপি (গডসে ডিভাইসিভ পলিটিকস) বলতে বোঝেন, সেটা দুই অঙ্কে পৌঁছে গিয়েছে।’’
আরও পড়ুন: চাষি বেচছেন ৮ টাকায়, আমরা ১২০ টাকায় কিনছি, পেঁয়াজের এত লাভ কার পকেটে যাচ্ছে?
প্রথম ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধির হার রেকর্ড পতনের পরেও অবশ্য অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন মানতে চাননি, এটা ‘মন্দা’। সংসদেও সে কথা ঘোষণা করেছেন। সেই দিকে নির্দেশ করে সীতারাম ইয়েচুরির কটাক্ষ, ‘‘এটাই নতুন ভারত। অর্থমন্ত্রী বলছেন, এটা মন্দা নয়। তা হলে সমাধানটা কোথায়? ...এটা সম্পূর্ণ একমুখী ট্রাফিক, কোনও আলোচনা নেই। এই সরকার কারও কথাই শুনতে চায় না।’’ তীব্র সমালোচনা করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন।